৭ বছরেও নওগাঁয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধা্রন সম্ভব হয়নি

প্রদীপ সাহা, নওগাঁ:

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশের মত প্রতিটি জেলায় শহরের সরকারী জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও নওগাঁয় দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরেও এখনও পর্যন্ত স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে জেলা প্রশাসন স্থান নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে ৩য় দফায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে দেয়া জায়গায় স্থান নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

 

অনুমোদন হয়ে আসলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। এদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই দায়ী করছেন মুক্তিযোদ্ধরা।

 
সুত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অবদান থাকলেও এই শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রে বসার কোন জায়গা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জায়গার কথা ভেবে এই জেলা শহরের কেন্দ্র বিন্দু ব্রীজের মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম জননেতা আব্দুল জলিল ১৯৯৮ সালে নিজ উদ্যোগে পৌরসভার অর্থায়ানে ছোট একটি “স্বাধীনতা“ নামের ভাষ্কর্য ও তার নীচে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংগ্রহশালা ও গবেষণা কেন্দ্র তৈরী করেন।

 
পরবর্তীতে অর্থভাবে সেটা মুখ থুবরে পড়ে আছে। সেখানে সংগ্রহ শালায় কিছু নেই। আছে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু ছবি। শহরের পশ্চিম দিকে বাইপাস মোড়ে ২০০০ সালে তিনিই “বিজয়” নামের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্তম্ভ তৈরী করেন। পরে ২০০৪ সালে শহরের মুক্তির মোড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলক তৈরী হয়।
এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি উঠলে প্রায় ৭ বছর আগে শহরের কেন্দ্র বিন্দুতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলকের এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবনের স্থান নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালির কারণে এই ভবনের অনুমোদন না আসায় ভবনের কাজ তৈরী করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।

 
সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশের মত প্রতিটি জেলায় শহরের জনবহুল সরকারী জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য বাস্তবায়ন করতে বলা হয় জেলা প্রশাসনকে। নির্দেশণা পেয়ে শহরের জনবহুল জায়গা থেকেও সেখানে না দিয়ে গত বছর শহরের পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথের জায়গা অত্যন্ত নিচু ও জলাবদ্ধতা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারন করে জেলা প্রশাসন। এতে ভবন নির্মাণের দ্বিমত পোষণ করেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। তাছাড়া ভবন নির্মাণের ব্যায় দাঁড়াবে নির্ধারিত ব্যায়ের চেয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। ফলে স্থান নির্ধারন না হওয়ায় আটকে আছে কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ।

 
জেলা মুক্তিযোদ্ধা জানান, আ’লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার, স্বাধীনতার পক্ষের সরকার। অবিলম্বে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই কমপ্লেক্স নির্মাণের অনুমতি দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম সামদানী জানান, জেলা প্রশাসন যেখানে জায়গা দিয়েছে সেটি ব্যাকোয়াট জায়গা। সেটা প্রায় মফস্বল বলা চলে। সেখানে কোন এনজিও অফিস হবে না, ব্যাংক হবে না। ভাল কোন দোকান পাট হবে না। কোন মুক্তিযোদ্ধাই সেখানে যেতে পারবে না। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের পক্ষে কোন মুক্তিযোদ্ধারা নন।

 
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে নওগাঁয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অবদান আছে। তা সত্ত্বেও এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের কোন বসার স্থান নাই। প্রয়াত জলিল ভাই নিজ উদ্যোগে একটি ঘর নির্মাণ করে দিলেও অর্থাভাবে মুখ থুবরে পরে আছে। সব জেলায় ভবন নির্মাণ হলেও এখানে এখনও কোন স্থান নির্ধারণ করতে পারি নাই। পূর্বে মুক্তির মোড়ে শহীদ মিনারের পাশে স্থান নির্ধারণ করে দিলেও সেটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখনও মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে।

 

পরে জেলা প্রশাসন যে জায়গা দিয়েছে সেখানে কোন রকমেই ভবন নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সেটা অত্যন্ত নিচু এবং ভবন নির্মাণে অনুপযোগী। পরে বাধ্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব জায়গায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

 
তাদের দাবী, আ’লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার, স্বাধীনতার সরকার অবিলম্বে মুক্তির মোড় অথবা তাদের নিজস্ব জায়গায় এই কমপ্লেক্স তৈরীর অনুমতি দেয়ার জন্য প্রধান মন্ত্রীর নিকট অনুরোধ জানান তিনি।

 
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার হারুন অর রশীদ জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অনেক সরকারি সম্পত্তি আছে। অথচ জেলা প্রশাসন তাতে ভবন নির্মাণের উদ্যেগ না দেয়া এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আমরা কমপ্লেক্স ভবন তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

তিনি আরও জানান মুক্তিযোদ্ধাদের স্বদ ইচ্ছার কোন অভাব নেই বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা শহরের কিছু দুরে এবং এক প্রান্তে। চলতি বছরে পুনরায় শহরের মাঝখানে অর্থাৎ গাঁজা সোসাইটির পাশে মুক্তিযোদ্ধদের নিজেস্ব জায়গার স্থান নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

 

অনুমোদন আসলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে এখন কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নেই বলেও জানান তিনি।

স/অ