রবিবার , ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

৭ বছরেও কাটেনি সংকট, এবার স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি

Paris
অক্টোবর ২০, ২০২৪ ৯:৫৫ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। আগে এসব প্রতিষ্ঠানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির সার্বিক কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালনা করলেও অধিভুক্তির পর এই দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল। তবে সাত বছর পার হলেও দূর হয়নি বৈষম্য, খরচই বাড়লেও দায়িত্বে দেখা গেছে চরম গাফিলতি।

ঢাবি অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা না করেই ঐতিহ্যবাহী এই সাত কলেজকে অনেকটা অপ্রস্তুত ও তড়িঘড়ি করে ঢাবির অধিভুক্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে অধিভুক্তির পর থেকেই প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা একের পর এক সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, সিলেবাস নিয়ে ধোঁয়াশা, তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ত্রুটিযুক্ত ফল, রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া উল্লেখযোগ্য।

ফলে শুরুর কয়েকটি বছর বিভিন্ন বিষয়ে দাবি আদায় করতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কাটিয়েছেন। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত হতে চান হতাশাগ্রস্ত এসব শিক্ষার্থী। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তারা দাবি তুলেছেন সাতটি কলেজ নিয়ে আলাদাভাবে ‘স্বতন্ত্র’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।

ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের কাছে সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের অভিপ্রায় জানিয়ে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন তারা।

সাত কলেজ সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধি ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর বলেন, সাত কলেজের জন্য কোনও একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, তীব্র ক্লাসরুম সংকট, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়া, সক্ষমতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা, ঢাবির থেকে সাত কলেজে অধিক সেশন ফি ও মানোন্নয়ন ফি নেওয়া, সেমিস্টার সিস্টেম না থাকা, সমাবর্তন, ল্যাব ও গবেষণা সংকট, উচ্চশিক্ষিত ও উপযুক্ত শিক্ষক সংকট ইত্যাদি বৈষম্য থেকে আমরা মুক্তি চাই।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সাত কলেজের নানা সংকট ও তার সমাধান হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসি চেয়ারম্যান ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রতিউত্তর না পাওয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সমর্থনের ভিত্তিতে আমরা আগামী ২১ অক্টোবর নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাব মোড়ে মানববন্ধন এবং ২৩ অক্টোবর মিরপুর রোড-সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।

তারা সব কলেজে আলোচনা সভা করেছেন জানিয়ে বলেন, এসব আলোচনা সভায় সব কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে এবং তাদের সবার দাবি উচ্চশিক্ষায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য ও সংকট নিরসনে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই। তারই প্রেক্ষিতে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ২২ সেপ্টেম্বর আমাদের সার্বিক সমস্যা ও সমাধানের পথ হিসেবে একটি সায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়েছি।

সাত কলেজ সংস্কার আন্দোলনের আরেক প্রতিনিধি এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, যেকোনও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি মূল্যবান উপাদান। শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্যই জনগণের টাকায় সরকার এত এত কর্মকাণ্ড করে। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন ও সাত কলেজ প্রশাসন কী করছে? অধিকাংশ গোমর ফাঁস হওয়ার পরও রাষ্ট্র কেন শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিচ্ছে না? গত দুই মাস সভা-সেমিনার, বিতর্ক, লেখালেখি করে সব সমস্যা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের নিরবতায় শিক্ষার্থীরা হতাশ। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যৌক্তিক সমাধান চাই।

সড়কে নেমে আন্দোলনের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, কোনও কূলকিনারা না পেয়ে এখন রাস্তায় নামার কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। রাস্তায় নামা ফরজ কাজ নয়। কর্তৃপক্ষ চাইলেই খুব সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু তারা কোনও ভালো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। এটাই মূল সমস্যা। সাত কলেজ ইস্যুতে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি একটি কমিশন গঠনের কথা ক্লিয়ার করে বলে দিয়েছেন। কমিশন খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বর্তমান শিক্ষার্থীরা কীভাবে চলবে। বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলে নতুন শিক্ষার্থীরা কীভাবে চলবে, শুধু একটি কমিশনের পক্ষেই এসব করা সম্ভব। কমিশন গঠন হলে গণহারে ফেল নামক শব্দ চিরতরে মুছে যাবে। রাষ্ট্র কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামবে না।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার বলেন, গত সাত বছর ধরে সাত কলেজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি, নীলক্ষেতে রাস্তা আটকিয়েছি কিন্তু স্থায়ী কোনও সমাধান পাইনি। তাই আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সাত কলেজের নানা সংকট ও তার সমাধান হিসেবে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনও উত্তর না পাওয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সমর্থনের ভিত্তিতে আগামীকাল আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, যেই আশা নিয়ে সাত কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম, সেশনজট আর অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে তা ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। অনেক অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ঝরে গেছে সাত কলেজের এই মানহীন সিস্টেমের কারণে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতেই আমাদের আন্দোলন। এই দেশে রাজপথে রক্তপাতই যখন অধিকার আদায়ের একমাত্র মাধ্যম, তখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও জানে কীভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, সাত কলেজের প্রতিটি কলেজেই অবকাঠামোগত সংকট রয়েছে। যেগুলো শিগগিরই সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি মাস্টার প্ল্যান। আমরা প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের চেষ্টা করছি। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমেই সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে দাবি, সেটি বিবেচনা করবে রাষ্ট্র। এই মুহূর্তে যেসব বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলেছেন, সেগুলো নিরসনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। এ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে সাত কলেজের প্রধানরা মিটিং করে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া বিদ্যমান সব সমস্যা সমাধানে জোর তৎপরতা চালানো হবে।

সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করে দ্রুত পরীক্ষাসহ অন্যান্য একাডেমিক কাজের গতিশীলতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সাত কলেজের প্রধানরা একটি মিটিংয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। তা ছাড়া ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গেও একটি মিটিং হয়েছে। যেখানে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। এখন আবারও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আলোচনায় বসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানে সাত কলেজ প্রশাসনের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - শিক্ষা