৭০ বছর পর প্রেম পত্র ফেরত পেল প্রেমিক-যুগল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কিম রোয়ি তার চিলেকোঠার ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে খুঁজে পেলেন অনেকগুলো চিঠি, যেগুলো ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালের মাঝামাঝি লেখা হয়েছে।

চিঠিগুলোর প্রাপক এবং প্রেরক কেন্টে থাকা নরমা হল এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে দেশের বাইরে কাজ করা বব বিয়াসলে।

কিম বলছিলেন আমার মা ২০ বছর আগে যখন আলদেরশটে থাকতেন তখন তার এক প্রতিবেশী তার চিলেকোঠার ঘরে এই চিঠিগুলো পান এবং ফেলে দিতে চান।

‘আমার মা সেগুলো দেখতে পান এবং আবিষ্কার করেন সেগুলো প্রেমপত্র। মায়ের মন আর সেগুলো রাস্তার ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলে দিতে সায় দিল না।”

” আমার মা -চেরি ভ্যালেন্স এক ঝলক দেখেই বুঝে গেলেন এটা কারও প্রেম পত্র। তাই তিনি চাননি সেগুলোর অযত্ন করতে” বলছিলেন কিম।

চেরি যখন বাসা বদল করেন সমারসেটে তখন সেই চিঠিগুলো সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি ২০১৬ সালে মারা যান, চিঠির মালিক নরমা হল এবং বব বিয়াসলেকেও তার পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এই বছর আবার যখন চিঠিগুলো কিমের দৃষ্টিগোচর হয় তখন তিনি ভাবলেন এই চিঠির মালিকের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে, আর সেটা করতে হবে এখনিই যাতে দেরি হয়ে না যায়।

তিনি কে বলছিলেন “আমি মাত্র দুটি চিঠি পড়েছি শুধু তথ্য নেয়ার জন্য। বাকিগুলো পড়িনি কারণ আমার মনে হয়েছে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।

বব নিশ্চয় নরমাকে অনেক ভালোবাসতো। আর চিঠিগুলো সংরক্ষণ করতো নরমা”।

কিম একটি চিটির খাম ফেসবুকে পোষ্ট করেন। আর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে লেখেন “আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন বব সেনাবাহিনীতে কাজ করতো আর নরমা কেন্ট এ থাকতো। পোষ্টমার্কে ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালের কথা উল্লেখ আছে। ফেসবুক দয়াকরে আপনাদের যা করার আছে সেটা করুন”।

কিন্তু তার ধারণা ছিল না তার এই সাহায্যের আহ্বান ১১ হাজার বার শেয়ার, ১৫০০ প্রতিক্রিয়া হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটা ঠিকানা এবং নতুন একদল এ যুগের ‘পত্রবন্ধু’ জুটে গেল।

একজন বন্ধু ফেসবুকে লিখে জানালো , তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এই দম্পতি ১৯৫১ সালে আক্সব্রিজে বিয়ে করেছেন।

কিন্তু ঐ ঠিকানায় একটা চিঠি পাঠালেন এবং আশা করলেন তিনি ঠিক পরিবারের কাছেই পাঠিয়েছেন। তিনি চাচ্ছিলেন এই চিঠির মালিকদের হাতে চিঠির বক্সখানা ফিরিয়ে দিতে।

১৯৪০ এর দশকে নরমা বিয়েসলি যখন ববের সাথে সাক্ষাত করেন তখন তিনি ছিলেন ১৮ বছরের এক নারী।

তারা বন্ধু ছিলেন পরে তাদের সম্পর্ক এক দীর্ঘস্থায়ী রোমান্টিক সম্পর্কে গড়ায়। নরমার বয়স এখন ৮৮।

তার কোন ধারণা ছিল না এই চিঠির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে।

বব যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন তখন নরমা তার মা-বাবার বাড়িতে থাকতেন।

নরমা যখন কিমের কাছ থেকে চিঠি পেলেন তখন অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পরলেন। কারণ তার কয়েক মাস আগেই বব মারা গেছেন ২০১৮ এর ডিসেম্বরে।

তিনি দ্রুত কিমকে উত্তর দিলেন চিঠিগুলো পাঠিয়ে দেয়ার জন্য এবং অবাক হলেন যে সেগুলো এখনো সেই আগের জুতার বক্সের মধ্যেই আছে।

নরমা কে বলেছেন বব মধ্যপ্রাচ্য এবং মিশর থেকে ফিরে আসার পরেই তারা বিয়ে করেন এবং ১৯৫১ সালে বাকিংহ্যামশায়ারে এক গ্রামে চলে যান।

বব তখন কাঠ মিস্ত্রির কাজ করছিলেন আর নরমা একটা অফিসে কাজ শুরু করলেন।

তাদের ৫ সন্তান এবং ৬জন নাতি-নাতনী রয়েছে। তিনি তাদের পুরনো দিনের কথা স্মরণ করছিলেন।

“আমরা প্রথমে একে অপরকে লেখা শুরু করলাম শুধু বন্ধু হিসেবে। তারপর এটা বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে গেল।”

”সে তার জীবন সম্পর্কে বলতো আর আমি বলতে আজ বাড়িতে কি হয়েছে। আমি মনে করি মিশরে তার জীবন আমার জীবনের চেয়ে বেশি মজার ছিল”।

“আমি চিঠি লিখতে পছন্দ করতাম না কিন্তু প্রতি সপ্তাহে আমি তাকে একটা চিঠি লিখতাম এবং একটা ম্যাগাজিন পাঠাতাম”।

যাইহোক যদিও তিনি চিঠিগুলো পেয়ে খুশি হয়েছেন কিন্তু যেহেতু বব আজ আর বেঁচে নেই তাই তিনি চিঠির খামগুলো খুলতেও আজ আর সাহস পাচ্ছেন না।

“চিঠিগুলো আগের মতই রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো আছে আমি যেমনটা করে পাঠাতাম। কিন্তু এখন আমি আর সেগুলো পড়তে পারবো না” বলছিলেন নরমা।