৬টি আসনেই আ.লীগের বিরোধ তুঙ্গে: রাজশাহীতে সক্রিয় হয়ে উঠছে এমপিবিরোধী গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত মঙ্গলবার রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোয়ালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ থেকে রাজশাহী-০৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে বাগমারা থেকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাগমারাকে এমপি এনামুলমুক্ত করারও ঘোষণা দেয়া হয়। গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময় এমপি এনামুলের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথাও তুলে ধরা হয়।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু বাক্কার মৃধা মনসুর রহমান প্রমুখ। গত ঈদের আগেও একটি সমাবেশ থেকে বাগমারায় এমপি এনামুলকে অবাঞ্চিত করেন এই নেতারা। রাজশাহীর শুধু এই আসনেই নয়, অন্য ৫টি আসনেও এমপিদের নিয়ে দলের অভ্যান্তরেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ আসনে এমপিবিরোধী শিবিরই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থায় রাজশাহীর ৬ এমপিদের অন্তত তিনজনের কপাল পুড়তে পারে বলেও দলের নেতাকর্মীরাই দাবি করছেন। সে ক্ষেত্রে নতুন মুখ আসতে পারে ওই তিনটি আসনে।

রাজশাহী-১ আসনে এমপি ফারুক চৌধূরীর মাঠে নেমেছেন অন্তত ডজন খানেক নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট প্রতিমন্ত্র্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আয়েশা আখতার ডালিয়া, মন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও দেওপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরুজ্জামান রবু, কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র একেএম আতাউর রহমান খান, মন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান, তানোর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা ইমরুল হকসহ আরও অনেকেই ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন। এমনকি এঁদের মধ্যে অন্তত সাতজন এবার এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা এলাকায় গণসংযোগও শুরু করেছেন। গণসংযোগ করতে গিয়েও তাঁরা এমপি ফারুক চৈৗধূরীর বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করছেন। রাজশাহীর এই আসনটিতে এমপিবিরোধী শিবিরই শক্ত অবস্থান তৈরী করে রেখেছেন বলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বর্তমান এমপি রয়েছেন ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তাঁকে সরাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেকটা ঐক্যব্ধ। দীর্ঘ ১৫ বছরে এই আসনে এমপি বাদশার দ্বারা আওয়ামী লীগের কোনো কাজে লাগেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ্যে বাদশাবিরোধী মন্তব্য করেছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম-সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টুসহ আরও অনেকেই। রাজশাহীর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, তিনবার এমপি হয়েছেন বাদশা। তবে রাজশাহীর উন্নয়নের যেমন কাজে লাগতে পারেননি, তেমনি আওয়ামী লীগের কোনো কাজে আসেননি। এ অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বাদশার বাইরে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি উঠেছে। এদিকে, এমপি বাদশাও সরকার দলের রাজশাহীর নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করেছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেও কোন্দল রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিতর্কিত ভিডিও ভাইরালের পরে দলেরে মধ্যে কোণঠাসা তিনি। তাকে দল থেকে বস্কিারেরও দাবি উঠেছে। এর আগে থেকেই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বিরোধ ছিল ডাবলুর।

রাজশাহী-৩ আসনে এমপি আয়েনবিরোধী অবস্থান তৈরী করেছেন অন্তত ডজন খানেক নেতা। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু, যুবলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ, সুরঞ্জিত কুমার সরকার, কাটাখালি পৌরসভার বরখাস্তকৃত মেয়র আব্বাস আলী, পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, হরিয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেবর আলী প্রমুখ। এমপি আয়েনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। এই আসনে এমপি আয়েনের বাইরে অন্তত ৫ জন নেতা আওয়াম লীগের মনোনয়ন পেতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে এমপি আয়েনও তার অবস্থান ধরে রাখতে এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন আলাদাভাবে।

রাজশাহী-৫ আসনে এমপি মুনসুর রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগে ১৫-২০ জন নেতা। সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক এমপি তাজুল ইসলামের ছেলে তাপস ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ঝালুকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আক্তার আলীসহ আরও অন্তত ডজন খানেক নেতা। এমপি মুনসুর ছাড়াও এখানে অন্তত চারজন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন এবং মনুসরবিরোধী সভা-সমাবেশ করছেন।

রাজশাহী-৬ আসনে এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেরাজ আলীসহ অন্তত ১০-১২ জন নেতা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও দুপক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে শাহরিয়ার বিরোধী গ্রুপের প্রার্থী আক্কাছ আলী জয়লাভ করেন। এতে অনেকটায় জাঙ্গা হয়ে উঠে আক্কাছ আলী গ্রুপ।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে কোন্দল থাকবেই। আর ক্ষমতায় থাকলে কোন্দলের মাত্রা একটু বেশিই হয়, তার পরেও আমাদের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। সামনে নির্বাচন উপলক্ষে এই কোন্দল এখন হয়তো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তবে মনোনয়ন পেয়ে গেলে আবার ঠিক হয়ে যাবে।’

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘সদর আসনে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝ থেকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। এখানে ধীর্ঘদিন থেকে দলের বাইরে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। এটি নিরসনের জন্য দলের নেতাদের কাউকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া প্রয়োজন।’

স/আর