৪৫% ইউপিতে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী

ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তুলনামূলক ভালো করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ২১৬ ইউপির মধ্যে ১১৭টিতে বা ৫৪.১৬ শতাংশ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ১২ ইউপিতে তাঁরা আগেই বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে গতকাল মঙ্গলবার পাওয়া বেসরকারি ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা এবার ৪৫.৪৮ শতাংশ ইউপিতে হেরেছেন।

অবশ্য আওয়ামী লীগ এই ধাপে ১৩ ইউপিতে কাউকেই নৌকা প্রতীক দেয়নি। এসব ইউপিতে দলের স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২১৬ ইউপির মধ্যে ৯৫টিতে বা ৪৩.৯৮ শতাংশ ইউপিতে জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় নেতারাও রয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনে জাতীয় পার্টির তিনজন, জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

এই ধাপের মোট ২১৮টি ইউপির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলেও দিনাজপুর সদরের চেহেলগাজী এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাররামপুর রামপুর ইউপির নির্বাচন আইনগত জটিলতায় স্থগিত করা হয়।

এর আগে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের দুই দফায় ৩৬৫টি এবং গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩, গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে এক হাজার, চতুর্থ ধাপে গত ২৬ ডিসেম্বর ৮৩৬ এবং পঞ্চম ধাপে গত ৫ জানুয়ারি ৭০৭টি ইউপিতে ভোট হয়। সপ্তম ধাপে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ১৩৮টি ইউপিতে এবং শেষ ধাপে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আটটি ইউপিতে ভোট হবে।

এবারের ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ পর্যন্ত বিনা ভোটে প্রতিনিধি হয়েছেন এক হাজার ৭২০ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৬৬ জন। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৯৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৯৫৮ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। মোট ছয় ধাপের নির্বাচনে তিন হাজার ৯৫৮ ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দুই হাজার ১৩৪টিতে জয়ী হন। আর স্বতন্ত্র প্রাথীরা জয়ী হন এক হাজার ৬৯৫টি ইউপিতে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও করছেন।

এবারের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। গত রবিবার পর্যন্ত নিহত হয়েছে ১০৯ জন।

ইসির ধারণার বাইরে ভোটের উচ্চহার : গত সোমবার অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোটের হার ইসির ধারণাকে ছাড়িয়ে গেছে। গত সোমবার ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছিলেন, ভোট পড়ার হার ৫৫ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু গতকাল ইসি থেকে পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে দেখা যায় ভোটের হার গড়ে ৬৯.৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ ৮৭.৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বগুড়া সদরের ফাঁপড় ইউপিতে। ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে ২২টি ইউপিতে। আর সর্বনিম্ন ৫৩.৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকার দোহার উপজেলার মকসুদপুর ইউপিতে। ৬০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১৬ ইউপিতে।

গতকাল পূর্ণাঙ্গ ফলাফল পাওয়ার পর ভোটের উচ্চহার সম্পর্কে জানতে ইসি সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ধাপের প্রায় শতভাগ ইউপিতে ভোট হয় ইভিএমে। আঙুলের ছাপ না মেলাসহ বিভিন্ন কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব হয় এবং অনেকে ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ