৪২ ফাউলের ম্যাচে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার কেউ জেতেনি

আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ ব্রাজিল বলেই নয়; আলবিসেলেস্তেদের কাছে ম্যাচটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচ জিতলে আজই কাতার বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হতে পারত।

অন্য দিকে হারলেও ক্ষতি নেই ব্রাজিলের। কারণ দুরন্ত সব জয় নিয়ে ব্রাজিল তার আগের ম্যাচেই কাতার বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছে।

এরপরও এ ম্যাচ হারতে চাইবে না সেলেকাওরা। কারণ ব্রাজিলের জন্য ম্যাচটা এক অর্থে প্রতিশোধের। আর্জেন্টিনা গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা জেতে ব্রাজিলের মাটি থেকে।

সেই প্রতিশোধের লক্ষ্যে আর্জেন্টিনার সান হুয়ানে বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় আলবিসেলেস্তেদের মুখোমুখি হয় সেলেকাওরা।

আর সেই স্নায়ুচাপের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। ৯০ মিনিটের খেলায় জালের দেখা পায়নি দুই দলের কেউ। অথচ ফাউল হয়েছে সবমিলিয়ে ৪২টি। দুই দলই সমান ২১টি করে ফাউল করেছে। আর্জেন্টিনা হলুদ কার্ড দেখেছে ৪টি আর ব্রাজিল ৩টি।

ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিট আর্জেন্টিনার দখলেই বল থাকে। অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ব্রাজিলের মাঝমাঠের খেলোয়াড়রা মেসিকে পথ খুলে দিচ্ছিল না।

নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণে উঠে ব্রাজিলও। ১৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে লুকাস পাকেতার পাসে বিপজ্জনক অবস্থানে বল পায় ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তবে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট বাকি থাকতে ব্রাজিলের ডিবক্সের কাছে ফাউলের ​​শিকার হন মেসি। কিন্তু বাঁশির শব্দ না শুনে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে রেফারির দিকে তাকান মেসি। তাতে কোনো সাড়া দেননি রেফারি।

৪০ মিনিটের সময় ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসনের পরীক্ষা নেন রদ্রিগো ডি পল। তার দূর পাল্লার শট ডাইভ দিয়ে ঠেকিয়ে দেন অ্যালিসন।

এভাবেই আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকটি আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয় নেইমারবিহীন ব্রাজিলের রক্ষণভাগ।

গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়  সুপারক্লাসিকোর প্রথমার্ধ। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াই আর্জেন্টিনা ছিল ৫৬ শতাংশ, আর ব্রাজিল ৪৪।  প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা চারটি কর্নার পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। লাউতারো মার্টিনেসকে উঠিয়ে জোয়াকিন কোরেয়াকে নামান স্কালোনি। লিয়েন্দ্রো পেরেদেসের বদলি হিসেবে নামেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ।

এর তিন মিনিট পরেই ম্যাথিউস কুনহাকে ফাউল করে জন্য হলুদ কার্ড দেখেন। ৭০ মিনিটের সময় বক্সের বাইরে থেকে বল পান ফ্রেড। তার দুর্দান্ত এক ভলি আর্জেন্টিনার গোলবারে আঘাত করে ফিরে আসে। ভাগ্যগুণে যে যাত্রায় রক্ষা পায় নীল-সাদার দল।

এর কিছু পরেই জিওভানি লো চেলসোর ফাউলে পেনাল্টির আবেদন জানায় ব্রাজিল। কিন্তু ভিএআর দেখে তাদের সেই আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি।

এর কিছু সময় পর পাল্টা আক্রমণে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস জুনিয়র।  তার শট সরাসরি এলে গ্লাভসবন্দী করেন মার্টিনেজ। এর কিছুক্ষণ পর আর্জেন্টিনার শট ব্রাজিলের দূরের পোস্ট দিয়ে চলে যায়। অ্যালিসনের সেদিকে খেয়ালই করতে হয়নি।

এরপর পর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় মার্কোস আকুনা এবং অ্যান্টনির মধ্যে। রেফারি উভয়কেই হলুদ কার্ড দেখান।

ম্যাচ শেষের ৫ মিনিট আগেও মেসিকে ছন্দে পাওয়া যাচ্ছিল না। গোটা ম্যাচে একটু ধীর গতির বলে মনে হয়েছে তাকে। বাম হাঁটু ব্যথায় ফের মাথাচারা দিয়ে উঠেছে এমনটা মনে হচ্ছিল।

তবে খেলার শেষ দিকে এই চোট নিয়েও জোরালো শট নেন মেসি, কিন্তু গোলরক্ষণ অ্যালিসন দুর্দান্তভাবে তা ঠেকিয়ে দেন। আশাহত করেন আলবিসেলেস্তেদের সমর্থকদের।

রেফারির বাঁশিতে গোলশূন্যাবস্থায় শেষ হয় ম্যাচ। এ ফলাফলের পর পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলকে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর