৩ হাজার কোটির মধ্যে আড়াই মাসে মাত্র ২০ কোটি টাকা বিতরণ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে আড়াই মাসে একটি ব্যাংক মাত্র ২০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। তিনটি ব্যাংক ২৩৭ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে। ২০টি ব্যাংক চলতি বছরের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতিবিষয়ক একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ড সচল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়। ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে ৩ বছর মেয়াদি আবর্তনশীল এই পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে ১ শতাংশ সুদে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেবে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে।

করোনার প্রভাব কাটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে দ্রুত ঋণ বিতরণ করার জন্য নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো সেটি করতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, তহবিলটি চালু করা হয় গত ২০ এপ্রিল। এরপর থেকে গত আড়াই মাসে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩২ কোটি টাকার ঋণ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিতরণ করেছে। এছাড়া পূবালী ব্যাংক ৫০ কোটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক ১৫৫ কোটি টাকা বিতরণের জন্য মঞ্জুর করেছে। অর্থাৎ প্রণোদনার বড় অংশই রয়ে গেছে অব্যবহৃত।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার প্রভাব মোকাবেলার জন্য টাকার কোনো অভাব নেই। কিন্তু টাকা দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছানোর সক্ষমতার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব না থাকলে ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে খুব ধীর গতিতে। যা দিয়ে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখা কঠিন হবে।

তিনি আরও বলেন, প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি থাকতে হবে। ব্যাংকগুলোকেও সোজা পথে দ্রুত ঋণ বিতরণ করতে হবে। কেননা, ব্যাংক জানে কে ঋণ নিয়ে ফেরৎ দেবে, কে দেবে না।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, দ্রুত ঋণ বিতরণ করতে লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেয়া হচ্ছে। শর্তও শিথিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আলোচ্য স্কিমের আওতায় ৪০টি ব্যাংক ঋণ বিতরণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করা ১৪১টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) সক্ষমতাবিষয়ক সনদপত্র ইস্যু করেছে। এর মধ্যে ১০৯টি প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রহণে সক্ষম। বাকি ৩২টি প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রহণে সক্ষম নয়। ফলে সক্ষমতার অভাবে এসব প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ থেকে ঋণ পাচ্ছে না।

আলোচ্য স্কিমে অংশগ্রহণকারী ৪০টি ব্যাংককে চলতি বছরের মধ্যে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ব্যাংক ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রেরণ করেছে। এর মধ্যে অগ্রণী ৪০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ১০ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ১০ কোটি, ডাচ-বাংলা ৭৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ১৫ কোটি, আইএফআইসি ৮ কোটি, মিডল্যান্ড ২০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৬০ কোটি, এনআরবি ৫৪ কোটি, এনআরবি কর্মাশিয়াল ২৪২ কোটি, ওয়ান ৫০ কোটি, প্রাইম ৩০ কোটি, পূবালী ৫০ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ৫০ কোটি, সোনালী ১২৫ কোটি, সিটি ১৮০ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ২০০ কোটি, উত্তরা ২০ কোটি, ব্র্যাক ৩৫৫ কোটি টাকা এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৫৪ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

 

সুত্রঃ যুগান্তর