৩ খুনের দায় একাই নিচ্ছেন মেহজাবিন, মানতে নারাজ স্বজনরা

রাজধানীর কদমতলীতে মা, বাবা ও বোনকে হত্যায় আর কারও সম্পৃক্ততার তথ্য দেননি গ্রেফতার মেহজাবিন ইসলাম মুন। তিনি একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি করছেন।

তবে তার স্বজনরা মেহজাবিনের এমন দাবি মানতে চাইছেন না। তারা বলছেন, মেহজাবিন ও তার স্বামী মিলেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। আর খুনের পরিকল্পনা করেছেন শফিকুল।

গত শনিবার সকালে কদমতলীর মুরাদপুর রজ্জব আলী সরদার রোডের পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীর (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

অচেতন অবস্থায় মেহজামিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় মেহজাবিন ও তার স্বামী শফিকুলের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা হয়েছে। রোববার মেহজাবিনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল সোমবার মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, সেই রাতের ঘটনায় তার কোনো ভূমিকা ছিল না।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, হত্যায় শফিকুলের কোনো যোগসাজশ ছিল কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আবার মুনের বক্তব্যও যাচাই করা হচ্ছে। এ জন্য দুজনকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

এদিকে মুনের খালা মোসা. ইয়াসমিন প্রথম দিন থেকেই এই হত্যাকাণ্ডে শফিকুলের ভূমিকা প্রধান বলে দাবি করে আসছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মুন হত্যায় জড়িত হলেও তার একার পক্ষে এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। স্বামীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সে হত্যায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছে। সন্তানকে মেরে ফেলার কথা বলে তাকে জিম্মি করা হয়েছিল। অথচ শফিকুল অচেতন থাকার ভান করে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ তাকে কড়াভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

মামলার বাদী মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মামলার দুই নম্বর আসামি শফিক একজন খুনি ও একাধিক মামলার আসামি। পাঁচ বছর আগে কেরানীগঞ্জে তিনি একজনকে হত্যা করেন। সে মামলা থেকে রেহাই পেতে শ্বশুরের কাছ থেকে টাকা নিতে প্রায় স্ত্রী মেহজাবিনকে চাপ দিতেন। টাকার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায় ঝগড়া হতো। এ ছাড়া শফিক তার শ্যালিকা মোহিনীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনা জানতে পেরে শাশুড়ি মৌসুমী তাকে বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। শফিকের সঙ্গে মৌসুমী পেরে উঠতে না পেরে মোহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান। তবে শফিক তদবির করে তাকে কারাগার থেকে বের করে আনেন এবং আবারও তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক শুরু করেন। এ নিয়ে স্ত্রী মেহজাবিন এবং শাশুড়ি মৌসুমীর সঙ্গে শফিকের কলহ লেগেই থাকত। চার বছর আগে শাশুড়িকে হত্যার উদ্দেশ্যে শফিক তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তার চিকিৎসা করাতেও বাধা দেওয়া হয়। দরজা-জানালা বন্ধ করে প্রায়ই শাশুড়ি মৌসুমীকে শফিক মারধর করতেন।

কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, মেহজাবিনের স্বামীকেও আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সম্পত্তির বিষয়ও এখানে রয়েছে। তদন্তে এসব আসবে।

সূত্র:যুগান্তর