৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলীর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার শুরু হওয়া এই তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিদিন দুদকের একটি দল রাজশাহী রেল ভবনে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।

সর্বশেষ গতকাল রবিবারও প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন দুদকের তদন্তকারীরা।

দুদকের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল করিম বলেন, ‘কিছু অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কয়েক দিন ধরেই তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

সূত্র মতে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় গত তিন বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে বিনা টেন্ডারে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে এ কাজগুলো করেছেন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার কাজে বলতে গেলে লুটপাট চলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়াই নামমাত্র কাজ করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবনার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের রিবেটিং কাজ বাবদ তিন কোটি টাকা, রাজশাহী রেলওয়ে ভবনের টিনশেডের টিন পরিবর্তনসহ সংস্কার বাবদ প্রায় চার কোটি টাকা, রাজশাহী রেলওয়ে অফিসার্স মেস সংস্কার বাবদ প্রায় তিন কোটি টাকা, বিভিন্ন স্টেশন বিল্ডিং সংস্কার বাবদ কোটি কোটি টাকা, রাস্তা সংস্কার, রেলওয়ে বাসভবন সংস্কারসহ নানা কাজের অজুহাতে কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকার বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা তৌহিদুল হক সুমন, প্রধান প্রকৌশলীর আত্মীয়স্বজনসহ নামে-বেনামে একের পর এক কাজগুলো করা হয়েছে কোনো টেন্ডার ছাড়াই। এমনকি ঠিকাদার নন এমন ব্যক্তিকেও কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন প্রধান প্রকৌশলী।

সূত্র আরো জানায়, প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আসাদুল হক ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কমপক্ষে পাঁচজন কর্মকর্তা কাজের নামে এই অর্থ লুটপাটে জড়িত রয়েছেন। তবে নাটের গুরু হলেন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী। তাঁর নির্দেশ ও অনুমোদনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজের কোনো হিসাবই নেই। এসব কাজ করা হয়েছে জরুরি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন কাজের (এলটিএম) অংশ হিসেবে।

জানা গেছে, পাকশীর অনিক এন্টারপ্রাইজকে ২৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা, ঢাকার মেসার্স এসএস করপোরেশনকে ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, মেসার্স আরকে ইন্টারন্যাশনালকে ২৬ লাখ ২৩ হাজার টাকার কাজ দিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ টাকাই লুটপাট করা হয়। এমনকি বেনাপোল বন্দরে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের তিনটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে টেন্ডার ছাড়াই। প্রধান প্রকৌশলী তাঁর পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজগুলো নামকাওয়াস্তে করিয়ে নিয়েছেন।

বিনা টেন্ডারে কাজের নামে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিপুল অঙ্কের টাকা তছরুপের একাধিক অভিযোগ সম্প্রতি দুদকে জমা পড়ে। এরপর তদন্তে নামে দুদক।

তবে এসব বিষয়ে গতকাল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনা টেন্ডারে কোনো কাজ হয়নি। সব কাজই নিয়ম মেনে করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

স/আর