২২ দেশকে ২৪ হাজার কোটি ডলার জরুরি ঋণ চীনের

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

এক দশক ধরেই এশিয়া, আফ্রিকা, এমনকি ইউরোপের অনেক দেশকেই ব্যাপকভাবে ঋণ দিয়ে আসছে চীন। মূলত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ সফল করার লক্ষ্যেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন এই ঋণ দিয়ে আসছে। যার ফলে দেশটির আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব যেমন বেড়েছে, তেমনি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ঋণদাতাও হয়ে উঠেছে।

নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, চীন এসব দেশের জন্য অন্যতম বৃহৎ বেইল আউট (জরুরি ঋণ) সহায়তাকারী হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। এসব দেশের বেশির ভাগই অর্থনৈতিক দুর্দশা বা ঋণ পরিশোধ নিয়ে সংকটে রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২১-এ সময়ে চীন ২২ দেশকে ২৪ হাজার কোটি ডলার জরুরি ঋণ দিয়েছে। এর প্রায় সব দেশই বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত। এর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, পাকিস্তান, কেনিয়া ও তুরস্ক। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বিশ্বব্যাংক, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল, কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ল্যাবএইড ডাটার গবেষকরা।

গবেষকদল জানিয়েছে, এসব জরুরি ঋণের বেশির ভাগই চীন দিয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কয়েক শ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে বেইজিং। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে দেশটি অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। কারণ এসব অর্থ যেসব প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে, সেগুলো থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী লভ্যাংশ পাওয়া যায়নি।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও এই প্রতিবেদনের অন্যতম গবেষক কার্মেন রেইনহার্ট বলেছেন, ‘বেইজিং মূলত নিজ ব্যাংককে বাঁচাতে চাইছে। এ কারণে তারা জরুরি ঋণ দেওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে।’ গবেষণায় পাওয়া গেছে, ২০১০ সালে চীনের আন্তর্জাতিক জরুরি ঋণ দেওয়ার পরিমাণ ৫ শতাংশ ছিল। কিন্তু সেটি ২০২২ সালের মধ্যে বেড়ে ৬০ শতাংশে উপনীত হয়েছে।

চীনের সবচেয়ে বেশি ১১১.৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে পাকিস্তান। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে মিসর। আর ৯টি দেশ এক বিলিয়নের কম ডলার পেয়েছে।

গবেষণায় বের হয়ে এসেছে, চীনের পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) সবচেয়ে বেশি ১৭০ বিলিয়ন জরুরি ঋণ প্রদান করেছে। ব্যাংকটির ঋণ পাওয়ার তালিকায় রয়েছে সুরিনাম, শ্রীলঙ্কা এবং মিসর। এর মধ্যে ব্রিজ লোন ছিল ৭০ বিলিয়ন ডলার।

এই গবেষণায় কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা করা হয়েছে, যেগুলো পিবিওসির সোয়াপ লাইন ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে তাদের বৈদশিক রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। চীনের জরুরি ঋণ নিয়ে করা এই গবেষণার অন্যতম প্রধান গবেষক ব্র্যাড পার্কস বলেছেন, চীনের ঋণ দেওয়ার বিষয়টি ‘অস্বচ্ছ এবং সমন্বয়হীন।’

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চীন ঘোষণা দিয়েছে- জাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ঘানার মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে ঋণ কাঠামো পুনর্গঠন করা হবে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ