২০৩৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চান কেন, জানালেন পুতিন

আরও ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকতে সংবিধান সংশোধনে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই গণভোটে ভূমিধস বিজয় হয়েছে এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাসকের। ফলে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে তার আর কোনো বাধা নেই। তথা ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার মনোবাসনা পূরণ হচ্ছে পুতিনের।

পুতিনের এই পদক্ষেপে রাশিয়ায় একনায়কতন্ত্র কায়েম হচ্ছে বলে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা হচ্ছে। তবে এসব সমালোচনা গায়ে মাখতে নারাজ সাবেক কেজিবি পুতিন।

কেন ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চান তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, তার দেশের সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের সংবিধান ছিল ‘ধীরগতির মাইন’ যা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল; কাজেই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুঃখজনক পরিণতি রোধ করতেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। তথা রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা সমৃদ্ধির লক্ষ্যেই তার এ সিদ্ধান্ত।
তিনি রাশিয়ার সরকারি চ্যানেল ওয়ানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রতি ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেন। পুতিন বলেন, যে সংবিধান বিশেষ একটি শ্রেণিকে তাদের নিজেদের ও কমিউনিস্টদের ভাগ্যকে গোটা জাতির ভাগ্যের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার অনুমতি দেয় তা বিলম্বিত মাইন ছাড়া আর কিছু নয়। পুতিন বলেন, কাজেই এই মাইনের বিস্ফোরণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সংবিধান সংশোধন ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।

গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত গণভোটে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে শতকরা ৭৭ ভাগ ভোট পড়ে। সমালোচকরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন এ সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত আজীবন ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছেন।
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে মোটেও তার ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেখতে নারাজ। তিনি সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ১৯৭৭ সালের সংবিধানে সরকারের সব কাজ কম্যুনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এবং এই পার্টির হাত থেকে অন্য কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এ কারণে কম্যুনিস্টরা তাদের ভাগ্যকে জাতির ভাগ্যের সঙ্গে জুড়ে দিতে পেরেছিল!

ভ্লাদিমির পুতিন এ নিয়ে চার মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম দুই মেয়াদে ৮ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংবিধান সংশোধন করে পার্লামেন্টের মেয়াদ ৬ বছর করেন। ২০২৪ সালে তার চতুর্থ দফার মেয়াদ শেষ হবে।

মাঝে যে ৪ বছর তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন না, সে সময়ও তিনি ছিলেন ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে বিশ্বস্ত ও অনুগত একজনকে প্রেসিডেন্ট করে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ৪ বছর। পরে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে লড়ে ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘ এই শাসনকালে সাবেক কেজিবিপ্রধান নিজেকে রাশিয়ার একজন শক্তিশালী শাসকে পরিণত করেছেন। এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি।

আরও ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা তার। এ কারণেই এই গণভোট।

রাশিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, এক ব্যক্তি একটানা দুবারের বেশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০০০ সাল থেকে দুই মেয়াদে চার বছর করে মোট আট বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালন করতে তিনি নিজের অনুগত রাজনীতিবিদ দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০১২ সালে মেদভেদেভের মেয়াদ শেষ হলে পুতিন আবার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেন।

ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘ করতে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ৪ বছরের জায়গায় ৬ বছর করেন পুতিন। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষ হবে ভ্লাদিমির পুতিনের। গণভোটে জয়ী হওয়ার ফলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ক্ষমতায় থাকতে পারছেন সাবেক কেজিবি প্রধান।