১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা বোঝা কঠিন

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। বাংলাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের চেয়ারম্যান ও ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসা সেবায় অনন্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদক পান ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।

খ্যাতিমান এ চিকিৎসক  স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘সুস্থ থাকুন’-এ মহামারী করোনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ

বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার চারশতের বেশি মানুষ। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?

এবিএম আবদুল্লাহ: গত কয়েক সপ্তাহ বিশেষ করে মে মাসের পরিসংখ্যানটা যদি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যাটা বেড়েই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মৃত্যুর হারটাও ওঠানামা করছে।

আমার কাছে যেটা মনে হয়, আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। মানুষ কোনো ধরণের সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না। অসচেতনভাবে মাঠ, হাটে-বাজারে,রেস্টুরেন্টে কিংবা গণপরিবহনে চলাফেরা করছেন। অনেকে মাস্কও পরছেন না। ফলে আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ছে।

জুনের শেষ অবধি যদি আক্রান্তের সংখ্যাটা ৩ থেকে ৪ হাজারের মধ্যেই থাকে। তাহলে আশা করছি,আক্রান্তের সংখ্যাটা সামনের মাসে কমা শুরু করবে। তারপরও এ মাসটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য সকলকে সচেতনভাবে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে।

 আইইডিসিআর-এর হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এ সংখ্যাটা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে কি না?

এবিএম আবদুল্লাহ: প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট দেশ হলেও আমাদের মোট জনগণ ১৭ কোটি। সেই হিসাবে প্রতিদিন যে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সেটা পর্যাপ্ত নয়। তবে সরকার তার সাধ্যমত চেষ্টা করছে।

শুরুতে ১ টি সেন্টারে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হতো বর্তমানে ৬১টি সেন্টারে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা বাড়াতে চাইলে মেশিন লাগে, দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। সেজন্য সময় প্রয়োজন। ১৫ থেকে ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আসলে দেশের প্রকৃত করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা বোঝা কষ্টসাধ্য।

যে আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা হয় সেটি করতে একটু সময় লাগে। অনেকে অভিযোগ করছেন এক সপ্তাহেও পরীক্ষার ফল পাচ্ছেন না।

এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, দ্রুত ফলাফলের জন্য র‌্যাপিড টেস্টের ডিভাইস বাংলাদেশে চালু করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে এটা আছে। এই কিট বা ডিভাইসের মাধ্যমে ১৫/২০ মিনিটে করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব।

আমার মনে হয় এ ধরণের কিট বাংলাদেশে আমদানি করা উচিত। তাহলে একদিকে যেমন দ্রুত পরীক্ষা করা যাবে,আবার জনগণের ভোগান্তিও কমবে।

এই আরটি পিসিআর টেস্টের জন্য বাংলাদেশে লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর সবচেয়ে ঝুঁকির কথা হচ্ছে,লাইনে দাঁড়িয়ে সুস্থ ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই দ্রুত টেস্টের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

করোনার এই দুর্যোগে একদম সামনে থেকে ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

সেক্ষেত্রে এই করোনা ফাইটারদের সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই সঠিকভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে কি না? তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে কি না?

এবিএম আবদুল্লাহ: করোনা সংকট মোকাবেলায় ডাক্তাররা একেবারে সামনে থেকে যুদ্ধ করছেন। আর যেকোনো যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে সৈন্য-সামন্তের পাশাপাশি অস্ত্র-বর্ম এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো প্রয়োজন। কাজেই চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক অবশ্যই প্রয়োজন।

নিজেকে সুরক্ষিত রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। ইতিমধ্যে ৪০ জনের বেশি চিকিৎসক এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।

করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ডাক্তারদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা পোশাক কিন্তু ছিল না। পর্যায়ক্রমে সুরক্ষা পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে।

ডাক্তাররা অভিযোগ করছেন,পিপিই’র মান খারাপ,নকলসহ দুর্নীতির বিষয়টি এসেছে। বিষয়গুলো অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ যারা সরাসরি যুদ্ধ করবে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে সামনে আরও বিপদ অপেক্ষা করছে।

কাজেই আমার দাবি, ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। সুরক্ষা পোশাকের কোয়ালিটি নিয়ে আর যেন প্রশ্ন না উঠে। সুরক্ষা নিশ্চিত হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল এবং সাহস বাড়বে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণমাধ্যমকর্মীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের সকলের জন্য একটা দাবি ছিল,তাদের যেন একটা প্রণোদনা বা ঝুঁকি ভাতা দেয়া হয়।

পাশাপাশি তাদের যেন স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনা হয়। তাহলে তারা উৎসাহিত হবেন এবং আরও সাহস নিয়ে এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।

করোনার এ মহামারীতে কারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে এবং কেন?

এবিএম আবদুল্লাহ: করোনার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্করা। বিশেষ করে যাদের বয়স ৬০ এর অধিক। যারা বিভিন্ন রোগ যেমন-ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,হৃদরোগ,লিভার, কিডনি সমস্যায় বা ক্যান্সারে আক্রান্তরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাদের আক্রান্তের এবং মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। তবে হ্যাঁ, আমাদের দেশে অনেক যুবকরাও কিন্তু মারা গেছেন। ফলে কেউ যে ঝুঁকি বাইরে এমনটা নয়। তবে বয়স্ক এবং উপরিউক্ত রোগীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন।

যুবকদের মধ্যে যারা ধূমপান করেন, বিভিন্ন নেশায় আসক্ত,ইয়াবা সেবন বা অ্যালকোহল নেন তারা ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং তাদের আক্রান্ত হওয়ার হারটাও বেশি। এসব নেশার কারণে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও যাচ্ছেন।

করোনার এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্যাকসিন আবিস্কারের সুসংবাদ পেলেও সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি।

ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞরা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনা থেকে বাঁচতে করোনীয় কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিন্তু ভ্যাকসিন ট্রায়াল চলছে। শতাধিক প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিস্কারের ব্যাপারে কাজ করছেন। আশা করছি,অন্তত এ বছরের মধ্যে কার্যকর একটা ভ্যাকসিন আবিস্কার হবে।

ভ্যাকসিন এলে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে। তবে এর আগে,আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি অর্থাৎ স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

পুষ্টিকর খাবার,প্রোটিন,ফ্যাট যেন পরিমাণ মত হয়। প্রচুর শাকসবজি,ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করবো। বাসায় থেকেই নিয়মিত হাঁটাচলা এবং হালকা ব্যায়াম করতে হবে।

যারা ধূমপানসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত তারা এগুলো বাদ দিবেন। জিংক ট্যাবলেট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারেন,ভিটামিন সি-যুক্ত ফলমূল খেতে পারেন।

ভিটামিন ডি পেতে প্রতিদিন সকালের রোদে ১৫/২০ মিনিট যেতে পারেন। আর যারা চলাচল করতে পারেন না তারা ভিটামিন ডি-এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে পারেন। এসব করলেই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাটা বাড়বে।

করোনা আতঙ্কে বর্তমানে সাধারণ চিকিৎসা পাওয়া একটু দূরহ হয়ে গেছে। এরমধ্যে কোভিড-১৯,নিউমোনিয়া বা ফ্লুয়ের লক্ষণগুলো কিছুটা একই রকম। এক্ষেত্রে করণীয় কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: করোনার কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। করোনাসহ সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যাথ্যা, হাঁপানি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু বা যেকোন ভাইরাল ইনফেকশনের লক্ষণ কিন্তু একই রকম।

তবে করোনার রোগীরা কোনো ঘ্রাণ বা খাবারে স্বাদ পান না, অনেকের খাবার রুচি থাকেনা, কারো কারো পাতলা পায়খানা হয়। এসব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

যেহেতু বর্তমানে ব্যাপকহারে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে,কাজেই এসব লক্ষণ যারই দেখা দিবে তাকে কিন্তু মাথায় রাখতে হবে হয়তো তার করোনাই হয়েছে। জ্বর,গলাব্যাথা,কাশি,ঘ্রাণ না পাওয়া কিংবা পাতলা পায়খানা হলে কেউ যেন হেলায় হেলায় সময় নষ্ট না করেন।

ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে করোনার টেস্ট করতেই হবে। আর লক্ষণ দেখে রোগ আলাদা করা এ সময় মুশকিল। আপনারা জানেন,এ সময় হাসপাতালে বেড,আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর সংকট।

কাজেই করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কেননা করোনা সিরিয়াস পর্যায়ে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। শুরু থেকে সতর্ক হয়ে চিকিৎসা নিলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘরে বসে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

করোনাকালীন এ সময়ে ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ভালো করেই জানেন এটা কখনো ভালো হবে না। সুগারটা কন্ট্রোলে রেখে সুস্থ থাকতে হবে। কাজেই ঘরে থেকেই তাকে একটু হাটচলা,হালকা ব্যায়াম,ডায়েট কন্ট্রোল অব্যাহত রাখতে হবে।

ডাক্তারের দেয়া ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে, নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই তারা বেশি ঝুঁকি মধ্যে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখতে হবে এবং সুগার স্বাভাবিক রাখতে হবে।

ডায়াবেটিসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ,হার্ট বা লিভারের রোগীদের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

এসব রোগীদের যদি সামান্যতম জ্বর,গলা ব্যাথা,শ্বাসকষ্টসহ করোনার কোন লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে করোনার বিষয়টা মাথায় রাখতেই হবে। তাদের জন্য জনসমাগম এড়িয়ে সুরক্ষিত থাকাটা উত্তম এবং সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে,করোনাভাইরাস থেকে শিশুরাও নিরাপদ নয়। শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আপনার পরামর্শ কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: প্রথমের দিকে বলা হতো,করোনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং মৃত্যুহার অনেক কম। কিন্তু বর্তমানে শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

আমি একটা কথা সবসময়ই বলি, করোনা একটা সাম্যবাদী রোগ। করোনা কিন্তু রাজা-বাদশা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, ধনী, গরীব কাউকেই চিনে না। কাজেই অসচেতন হলেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

শিশুরা খুব চঞ্চল তারা বাইরে যেতে চায়,খেলতে চায়। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। শিশুদের বাসায় রেখে তাদের পর্যাপ্ত বিনোদন এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিকভাবে তাদের প্রফুল্ল রাখতে হবে। তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশেষ করে ফলমূল এবং শাকসবজিতে জোর দিতে হবে। বাচ্চাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম বলে তারা যা খুশি তাই করবে,এ ব্যাপারে বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে। শিশুর মধ্যে করোনার কোন লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ছে। এ সময় কারো মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে কি করতে হবে এবং যারা জ্বরে ভুগছেন তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: প্রথমত কারো মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাবেন আর হাঁচি,সর্দি,কাশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খাবেন। অর্থাৎ হেলাফেলা না করে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

এছাড়াও গরম পানি,পুষ্টিকর খাবার,ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি কষ্টসাধ্য হলেও করোনার টেস্ট করাতে হবে। মনে রাখতে হবে,টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ হলেও কিন্তু করোনা হতে পারে।

আমরা যে, আরটিপিসিআর পরীক্ষা করি এটা কিন্তু ১০০ ভাগ রেজাল্ট আসে না। গড়ে ৭০ ভাগ রেজাল্ট আসে। অর্থাৎ ৩০ ভাগ কিন্তু করোনা থাকার পরও নেগেটিভ রেজাল্ট আসতে পারে।

কাজেই করোনার লক্ষণ দেখা দিলে ঘাবড়ে না গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

আরেকটা কাজ করা যেতে পারে। বাজারে অক্সিমিটার পাওয়া যায়, রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ দেখার জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি। অক্সিজেন প্রবাহ ৯৩/৯৪ এর নিচে আসলে ধরে নিতে হবে সিরিয়াস অবস্থা। আর যদি কারো শ্বাসকষ্ট হয়,বুকে ব্যাথা হয়,চামড়ার নিচে রক্ত জমাট হয় তাহলে কিন্তু হাসপাতালে যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেন দিলে রোগী আরাম পাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ওষুধ আছেন যেটা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই বলে দিবেন।

প্রতিদিন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩০ জনের বেশি রোগী মারা যাচ্ছেন। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই করোনা নিয়ে জনমনে এক ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে। এমন অবস্থায় কেউ যদি কোভিড-১৯ পজিটিভ হন তার জন্য আপনার পরামর্শ কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: এ সময় আসলে মনোবল ধরে রাখাটা খুবই জরুরি। আমাদের কিন্তু লক্ষণ ভেদে চিকিৎসা আছে সেটা চালিয়ে যেতে হবে।

পজিটিভ ব্যক্তিকে আইসোলেটেড রাখতে হবে। তার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে, বাইরে থেকে খাবার সরবরাহ করতে হবে। সম্ভব হলে আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জিংক ট্যাবলেট,ভিটামিন সি ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। আর অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। করোনা রোগীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে,নিজেকে সবার কাছ থেকে একটু আলাদা করে রাখা।

যাতে তার মাধ্যমে এ ভাইরাসটি অন্য কারো মধ্যে না ছড়ায়। কোভিড-১৯ পজিটিভ এমন ৮০ শতাংশ মানুষই কিন্তু বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। কাজেই ভীতসন্ত্রস্ত,আতঙ্কিত না হয়ে মনে সাহস রেখে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

মহামারী করোনার এ প্রেক্ষাপটে সুস্থ থাকতে হলে আপনার পরামর্শ কি?

এবিএম আবদুল্লাহ: আমি সবসময়ই একটা কথা বলি, জীবন আপনার আর এটি সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু আপনার হাতে। কাজেই নিজের সুরক্ষার দায়িত্ব কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে।

লকডাউন আর বিধিনিষেধ বলুন, এসব যদি না মানেন তাহলে কিন্তু কোন লাভই হবে না। নিজের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতেই হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরবেন,যেখানে-সেখানে হাঁচি কাশি থুথু ফেলবেন না।

টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করলে সেগুলো ব্যবহার শেষে ঢাকনা যুক্ত ডাস্টবিনে ফেলবেন। বার বার হাত ধুঁতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। সভা,সমাবেশ বা ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। এসব ব্যাপারে উদাসীন হলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।

মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য যার যার ধর্মীয় চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন। সবাই মিলে নিজ নিজ নাগরিক দায়িত্ব পালন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেই করোনার বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে।

 তথ্যবহুল পরামর্শের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এবিএম আবদুল্লাহ: করোনার বিরুদ্ধে আমরা নিশ্চয় জয়লাভ করবো সেই প্রত্যাশা করছি। আমার কথা তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

সুত্রঃ যুগান্তর