১৪ সপ্তাহে বিএনপির ১২৪৯ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড: কায়সার কামাল

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ্ঞাবহ করার এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। তার বক্তব্যে প্রতিভাত হয়েছে যে, জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে আপসহীন আন্দোলন বিএনপি চালিয়ে যাচ্ছে, সেই আন্দোলনকে স্তব্দ করার জন্য বর্তমান অনির্বাচিত সরকার ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ২১ হাজার ৮৩৫ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে অন্তরীণ করেছে।গত ১৪ সপ্তাহে ৭৯টি মামলায় বিএনপির এক হাজার ২৪৯ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে।’

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কায়সার কামাল বলেন, ‘‘একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের একটি বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে ভোটে আনতে সব চেষ্টাই করেছে আওয়ামী লীগ। এমনকি এক রাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাবেও বিএনপি রাজি হয়নি’। তিনি আরও বলেন, ‘বারবার নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেওয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার না করলে বাংলাদেশে আজ হরতালের দিন গাড়ি চলতো না। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না, বিকল্পও ছিল না। যেটা করেছি আমরা চিন্তাভাবনা করেই করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেতো।’’

‘আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বর্তমান অনির্বাচিত সরকার কীভাবে করায়ত্ত করেছে।’ বলেন কায়সার কামাল।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যা আসলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু মহাসমাবেশ চলাকালে সরকারি দল, তাদের পেটোয়া বাহিনী এবং দলদাসে পরিণত হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বিনা উসকানিতে মুহুর্মুহু বিকট শব্দের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বিএনপির জনসভা শুধু পণ্ডই করেনি, যুবদল নেতা, একজন সাংবাদিক এবং একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা। অগণিত নেতাকর্মী এবং জনগণকে আহত করা, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং নির্যাতন করার এক প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাকের এই অকপট বক্তব্য আসলে ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ্ঞাবাহ করার এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। তার এই বক্তব্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অস্তিত্বকে শুধু অস্বীকারই করেনি, জাতিকে বার্তা দিয়েছে যে, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন- সবকিছুই ফ্যাসিস্ট সরকারের ইচ্ছার কাছে মাথা নত করেছে। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান ব্যক্তি শেখ হাসিনার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ওপরেই সবকিছু নির্ভর করে।’

‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ছাড়া, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি গ্রহণ করেছে, সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য বিএনপি অন্যান্য গণতান্ত্রিক সমমনা, রাজনৈতিক দল, জোট সর্বপোরি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।’ বলেন এ আইনজীবী।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, ইউএলএফে সমন্বয় সৈয়দ মামুন মাহবুব, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. কামাল হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।