শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০১৯ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

১৪ বছর ধরে মান্দা আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক তারা: রয়েছে অভিযোগের পাহাড়

Paris
নভেম্বর ২৩, ২০১৯ ৭:৪২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতায় ১৪ বছর ধরে হয়নি কাউন্সিল। সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ এমদাদুল হকের বিুরদ্ধেও রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। ২০০৫ সাল থেকে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়নি। এই ১৪ বছরে আর কখনো কাউন্সিল হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

গত ১৩ অক্টোবর রাজশাহীতে হয়ে যাওয়া বিভাগীয় প্রতিনিধি সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, ‘একটি কমিটি এতোদিন ধরে থাকবে এটি মেনে নেওয়া যায় না। স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এখানে এতোদিন কাউন্সিল করা হয়নি। তবে দ্রুত এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দিতে হবে জেলা কমিটিকে। না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় এমপি ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের ছত্রছায়ায় মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক সরদার মোহাম্মদ জসিম গত ১৪ ধরে কাউন্সিল হতে দেননি। এ কারণে তাঁরা এখন এলাকায় সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি তারা। নিয়োগ বাণিজ্যের হোতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

১৯৯০ সালের দিকে মান্দার কুসুম্বা এলাকার খোদাবক্সকে ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করেন সভাপতি এমদাদুল হক মোল্লা। ওই সময়ে তিনি বেশ কয়েক বছর কারাবরণও করেন। পরে মামলাটি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এরপর মামলাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এমদাদের চাচা আব্বাস আলী মোল্লা ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধের হাতেই নিহত হোন।

দলীয় সূত্র মতে, এমদাদ আলী মোল্লার আপন শ্যালক মকলেছুর রহমান মকে হলেন মান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। শালা-দুলাভাই মিলে মান্দায় বড় দুই দলের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করেন। আর এই সুযোগে এলাকায় এই পরিবারটি গড়ে তুলেছেন রাজত্ব। জমি দখল থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের হোতা মোল্লা পরিবার।

মোল্লার ছেলে মহিদুল হক বাদশার বিরুদ্ধে এক সংখ্যালঘু কিশোরীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালের এই ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ওই সময় সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে ভারত সরকারও বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করে। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আত্মসমপর্ণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর এমদাদ মোল্লা তার ছেলেকে নিয়ে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে আসেন। কিন্তু এই মহিদুল হক বাদশা পরে জামিনে মুক্ত পেয়ে তিনি বাপের সঙ্গে গড়ে তুলেন রাজত্ব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমদাদুল হক মোল্লার এখন মোট ৯টি বাড়ি। মান্দার যেসব স্থানে মোল্লার বাড়ি রয়েছে, এর মধ্যে প্রশাদপুরে আলিশান ‘মোল্লাবাড়ি’, বেলালদহ গ্রামে পাশাপাশি দুটি বাড়ি, একই গ্রামে রয়েছে ছেলে রাশেদের আরেকটি বিলাশবহুল বাড়ি, উপজেলা সদরের ইউএনও কার্যালয়ের সামনে সরকারি জায়গা দখল করে মোল্লা টাওয়ার, সদরেই রয়েছে আরেকটি বাড়ি, যেটিতে পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয় করা হয়েছে। মান্দার ফেরিঘাট ব্রিজের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা একটি বাড়ি, প্রশাদপুর বাজারের চার মাথায় রয়েছে ছেলে মহিদুল হক বাদশার আলিশান আরেকটি বাড়ি। মোল্লার মোট ছয় ছেলে। আর চার মেয়ে। ছয় ছেলের নামেই তিনি পৃথক বাড়ি করেছেন।

মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এমপি ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের ডান হাত হলেন এই মোল্লা। ইমাজের কারণে আমরা বার বার সম্মেলন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তাই মোল্লা ১৪ বছর ধরে রাজত্ব করে চলেছে। তিনি এলাকায় যদি বলেন আজ সূর্য পশ্চিমদিকে উঠবে এলাকার মানুষকে সেটাই ভেবে নিতে হবে। মান্দায় মোল্লা পরিবারের কারণে এখনো তটস্থ সাধারণ মানুষ। মোল্লার নির্দেশ ছাড়া এই উপজেলায় কোনো কাজ হয় না। তাদের পরিবারটিই হলো তদবিরবাজ।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই মোল্লার অন্যতম সহযোগী হলো সরদার মোহাম্মদ জসিম। এই জসিম এলাকায় শয়তান জসিম নামে পরিচিত। তার দাপটেও অতিষ্ঠ মানুষ। এই দুজনের কারণেই এতোদিন ধরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। এ কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও দলের প্রতি অনেকটা বিরাগভাজন হয়ে আছে।’
মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অনুপ কুমার মোহন্ত বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল না হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এমদাদ মোল্লার ছেলেরা আমার বাড়িতেও হামলা করেছিল। তাদের বিষয়ে এলাকার সবাই জানে। আমাদের কিছুই বলতে হবে না।’

স্থানীয় নুরুল্লাহবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রবীন নেতা প্রবোদ কুমার পোদ্দার বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদ আলী মোল্লা এলাকায় রাঘব বোয়াল। তিনি এবং তাঁর ছেলেরা এলাকায় বালুমহাল থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পাই না। এরা সেই সুযোগে কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটে নিয়েছে গত কয়েক বছরে। একসময় কিছুই ছিল না এদের। কিন্তু এখন মোল্লাসহ তার প্রত্যেক ছেলের রয়েছে আলাদা বাড়ি, আলাদা গাড়ীসহ অগাধ সম্পদ।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক জসিমেরও রয়েছে অগাধ সম্পদ। এরা ক্ষমতার অপব্যাবহার করে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন। এদের কারণে দল এখন ন্যুব্জ। এদের হাত থেকে দ্রুতই মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।’

জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগেই ৫-৭ লাখ টাকা বাণিজ্য হয় এটা স্বাভাবিক। এটা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই এই টাকাগুলো আদায় করা হয়। তবে আমাদের সাধারণ সম্পাদক সরদার জসিম উপজেলার ৫-৬টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রয়েছেন বলে জানি।’

বিপুল সম্পদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতা মোল্লা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ‘তিনটি বাড়ি আমার নিজ নামে। আর ছয়টি বাড়ি ছয় ছেলে নামে। তারা নিজস্ব আয় দিয়ে করেছেন। আর বালু ব্যবসার লিজ নিয়ে দুই ছেলে মহিদুল হক বাদশা ও মাহফুজ সেগুলো সাব লিজ দিয়ে দেন। তারা বালুর নিয়ন্ত্রণ করেন এটা ঠিক না।’

দীর্ঘদিন কাউন্সিল না হওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘এমপি মোহদয় চাননি তাই কাউন্সিল হয়নি। তিনি চাইলে কাউন্সিল হতো। এখন আমরা কেন্দ্রের নির্দেশে ইউনিয়নের কাউন্সিল করছি। নির্দেশ পেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলও হবে।’

জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি নিয়মতান্ত্রিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই সভাপতি। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমার নিয়ন্ত্রণে আছে এটা সঠিক। কিন্তু কোনো বাণিজ্য হয়নি।’

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর