সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
১৪ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণ। আর সেই ধর্ষণ চালিয়েছে মেয়েটির বাবার চার বন্ধু। বারাসতের পুলিশ সুপার অফিসের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই নাবালিকার গণধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বারাসতের ময়নার বসুন্ধরা এলাকায়।
নির্যাতিতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে বারাসত থানার পুলিশ তিন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছে। একজন অভিযুক্ত পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, তিন অভিযুক্তের নাম বাবু দাস, শ্যামল পাল, সঞ্জীব দাস। এই ঘটনায় অন্য অভিযুক্ত মিলন দাস পলাতক।
মঙ্গলবার তিন অভিযুক্তকেই হাজির করা হয় বারাসত আদালতে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে এই চার জনের পাশবিক প্রবৃত্তি মেটাতে হয়েছিল এই নাবালিকাকে।
এই ঘটনায় উত্তেজিত মানুষ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অভিযুক্ত বাবু দাসের খাবারের দোকানে ভাঙচুর চালায়।
উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা সদর বারাসতের পুলিশ সুপারের অফিস সংলগ্ন ময়নার বসুন্ধরা এলাকায় একটি বিরাট বাগানবাড়ি রয়েছে। এই বাগানবাড়িতেই কেয়ারটেকারের কাজ করেন নির্যাতিতার বাবা। বছর খানেক আগে স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বাবা এবং মেয়ে এই বাগানবাড়িতেই থাকতে শুরু করেন।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে মাঝখানে রেখে বসুন্ধরার ঠিক বিপরীতে একটি খাবারের হোটেল রয়েছে অভিযুক্ত বাবু দাসের। এলাকায় থাকার সূত্রে বাবুর সঙ্গে পরিচিতি রয়েছে নির্যাতিতার বাবার। এই চার জন নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে নিয়মিত মদ্যপানও করতেন বলে জানা গিয়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাবুর সাহায্যে নির্যাতিতার বাবাকে নেশাগ্রস্ত করে বেহুঁশ রেখে দীর্ঘ দিন ধরেই নাবালিকার উপরে যৌন হেনস্থা চালাত অভিযুক্তরা। স্থানীয় যুবক সমীর দাস জানান, ‘‘সোমবার রাতে ছিল বিশ্বকর্মা পুজোর অনুষ্ঠান। রাত প্রায় বারোটা নাগাদ রাস্তার পাশের ওই বাগানবাড়ি থেকে নাবালিকার চিৎকার শুনতে পাই। বেশ কয়েকজন এলাকার ছেলে সেখানে গিয়ে দেখে নাবালিকার দেহে কোনও বস্ত্র নেই। ঘরের মধ্যে রয়েছে মিলন দাস। মিলন বারাসাত কালিবাড়ি এলাকার ছেলে। তার একটি লন্ড্রির দোকান রয়েছে সেখানে। স্থানীয়রা নাবালিকার সঙ্গে কথা বলার সময়ে মিলন পালিয়ে যায়।’’
জানা গিয়েছে, সেই সময়ে নাবালিকার বাবা মদ খেয়ে কার্যত সংজ্ঞাহীন। এলাকার ছেলেদের কাছেই কান্নায় ভেঙে পড়ে নাবালিকা। বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে স্থানীয়রা জানতে পারেন নাবালিকার থেকে। নাবালিকার মাধ্যমে প্রতিবেশীরা জানতে পারেন এক বছরের বেশি সময় ধরে চার অভিযুক্ত পাশবিক ভাবে যৌন হেনস্থা করত ওই নাবালিকাকে। তারা এই বলে ভয় দেখাত যে, এই কথা কাউকে জানালে বিষ খাইয়ে বাবাকে মেরে ফেলবে। সেই ভয়ে মেয়েটি মুখ বুজে সহ্য করত পাশবিক অত্যাচার।
সোমবার সব জানাজানি হওয়ার পরে স্থানীয়রাই খবর দেন বারাসত থানার পুলিশের কাছে। বাবু দাসকে তারা আটকে রাখেন। পরে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। নির্যাতিতার বাবা পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এবং নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী বারাসত থানার পুলিশ সোমবার রাতেই বাবু দাসকে জেরা করে শ্যামল পালকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার সকালে এলাকার মানুষই সঞ্জীব দাসকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
উত্তর চব্বিশ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাবালিকার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে। পলাতক অভিযুক্ত মিলন দাসের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে বারাসত থানার পুলিশ।