১১৮ শিশু দত্তক নেয়া সেই লাভ মাদারের ২০ বছরের কারাদণ্ড

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

১১৮ শিশু দত্তক নেয়া লাভ মাদার নামে খ্যাত এক নারীকে চীনের একটি আদালত ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

বুধবার দেশটির হেবেই প্রদেশের একটি আদালত চাঁদাবাজি, জালিয়াতি ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৫৪ বছর বয়সী লি ইয়ানজিয়াকে এ দণ্ড দেন। পাশাপাশি তাকে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন কোটি ২৮ লাখেরও বেশি টাকা) জরিমানা করেন আদালত।

ওই নারীর ছেলেবন্ধু জু কির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাড়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও অর্থদণ্ড করেছেন আদালত।

২০০৬ সালে লি ইয়ানজিয়া ব্যাপকসংখ্যক শিশু দত্তক নেয়ার ঘটনায় সংবাদপত্রের শিরোনাম হন। তিনি হেবেই প্রদেশের উয়ান শহরে বাস করতেন। ওই সময়ে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন- একসময়ে বিয়ে করলেও পরে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।

তিনি অভিযোগ করেন, তার সাবেক স্বামী তাদের ছেলেকে সাত হাজার ইউয়ানের বিনিময়ে পাচার করে দেয়। পরে ছেলেকে ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। তখন থেকেই তিনি অনুভব করেন, অন্য শিশুদেরও তার একইভাবে সাহায্য করা উচিত।

এর পর ধীরে ধীরে হেবেই প্রদেশের অন্যতম ধনী নারীতে পরিণত হন তিনি। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি একটি লোহা খনন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। একপর্যায়ে সেটির মালিক বনে যান। লির প্রথম শিশু দত্তক নেয়ার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এ কোম্পানি।

ওই সময়ে হেবেইয়ের স্থানীয় একটি দৈনিককে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি প্রায়ই খনির চারপাশে একটি পাঁচ-ছয় বছর বয়সী এক মেয়েশিশুকে ঘোরাঘুরি করতে দেখতাম। তার বাবা মারা গিয়েছিল…, মা পালিয়েছিল…; সে কারণে ওই শিশুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসি। সেই আমার প্রথম দত্তক নেয়া শিশু’। পরে আরও শিশু দত্তক নিতে থাকেন তিনি। আর একসময়ে ‘লাভ ভিলেজ’ নামে একটি এতিমখানা খোলেন তিনি। ২০১৭ সালে তার দত্তক নেয়া শিশুর সংখ্যা ১১৮-তে পৌঁছে।

ওই বছরে স্থানীয় বাসিন্দারা তার সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক করে। ২০১৮ সালের মে মাসে পুলিশ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই কোটি ইউয়ান ও ২০ হাজার মার্কিন ডলারের হদিস পায়। এ ছাড়া ল্যান্ড রোভার ও মার্সিডিজ বেঞ্চের মতো বিলাসবহুল গাড়িরও সন্ধান পায় পুলিশ। ২০১১ সাল থেকে লি ইয়ানজিয়া অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে জানতে পারে পুলিশ।

দত্তক নেয়া শিশুদের ব্যবহার করে নির্মাণ খাতের কোম্পানিগুলোকে হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ও করতেন তিনি। এ ছাড়া অনাথ আশ্রম তৈরির নাম করে লির বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।

পরে তাকে আটক করা হয়। তাকে আটকের পর ৭৪ শিশুকে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।