হ্যান্ড স্যানিটাইজার: বড় বাধা রেক্টিফাইড স্পিরিটের ওপর মাদক শুল্ক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

কোভিড-১৯ এর (করোনাভাইরাস) ভয়াবহতা মোকাবেলায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহজলভ্য করতে দেশে উৎপাদিত রেক্টিফাইড স্পিরিটের ওপর লিটারপ্রতি ১১১ টাকার মাদক শুল্ক অব্যাহতি দিতে হবে। অপরদিকে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতিও থাকতে হবে। তা না হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেড়ে যাবে।

এ দুটি বিষয় নিষ্পত্তি করা হলে জরুরি ভিত্তিতে স্যানিটাইজার উৎপাদন এবং এর কাঁচামাল সরবরাহে যেসব ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠান সাময়িক অনাপত্তিপত্র পেয়েছে তারা স্বল্পমূল্যে বাজারজাত করতে পারবে। এ জন্য গত ২২ মার্চ এনবিআর থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে আইসো প্রপাইল অ্যালকোহল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ছাড়ের যে সুবিধা দেয়া হয়েছে তা দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত রেক্টিফাইড স্পিরিট উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে সংশোধিত আদেশ জারি করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, এ নিয়ে বেশি নথি চালাচালির প্রয়োজনও নেই। যেহেতু সব ধরনের আমদানি বন্ধ থাকায় আইসো প্রপাইল অ্যালকোহল আমদানিও বন্ধ রয়েছে, সেহেতু জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করা ঠিক হবে না।তারা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চাহিদা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উৎপাদন বাড়াতে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে জনসাধারণের হাতে হাতে পৌঁছে দিতে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। কেননা, বিদ্যমান উচ্চশুল্ক বহাল থাকলে কারও পক্ষে এটি সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। যারা জনস্বার্থে বিনামূল্যে দিতে চান তারাও বেশি আগ্রহী হবে না। তাই এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল হল আমদানিনির্ভর আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল অথবা দেশে উৎপাদিত ইথাইল অ্যালকোহল বা রেক্টিফাইট স্পিরিট। এর মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে বেশি কার্যকর হল রেক্টিফাইড স্পিরিট।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্ব এক রকম লকডাউন করা হয়েছে। ফলে প্রায় এক মাস ধরে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এতদিন যেসব ওষুধ কোম্পানি আইসো প্রোফাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করত তারাও এখন কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না।

এর মধ্যে গত ২২ মার্চ এনবিআর থেকে ৯২ নং এসআরও জারি করে আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল আমদানির ওপর সব ধরনের শুল্ক ছাড় দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় উৎপাদকরা বলছেন, এ শুল্ক ছাড় আগে দরকার ছিল রেক্টিফাইড স্পিরিটের ওপর। কেননা, ফ্যাক্টরি থেকে প্রতি লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট বাজারজাত করার জন্য বের করতে হলে মাদকশুল্ক দিতে হয় লিটারপ্রতি ১১১ টাকা। এ ছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনের ওপর এনবিআরের ভ্যাট তো আছেই।

উল্লেখ্য, আইসো প্রোফাইল অ্যালকোহল সংকটের কারণে ইতিমধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এবং যমুনা ডিস্টিলারিজ লিমিডেটসহ রেক্টিফাইড স্পিরিট উৎপাদনে সক্ষম কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যমুনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যমুনা ডিস্টিলারিজ লিমিডেট জাতির এ দুর্যোগকালীন মুহূর্তে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের আহ্বানে সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়েছে। এরপর খুব দ্রুততার সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সাময়িক ভিত্তিতে যমুনা ডিস্টিলারিজ লিমিডেটের অনুকূলে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনাপত্তিপত্র ও অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু স্বল্পমূল্যে জনসাধারণের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে চাইলে সব ধরনের শুল্ক ছাড়ের বিষয়টি আগে নিষ্পত্তি করতে হবে। এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।