হ্যাকিং ঝুঁকির চেয়ে জুজুর ভয় বেশি!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার ধুয়া তুলে বড় ধরনের বাণিজ্যের চেষ্টা করছে দেশি-বিদেশি আইটি প্রতিষ্ঠান। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার বিক্রির পাশাপাশি পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করছে। আর সেগুলোতে বক্তাদের দিয়ে নিরাপদ আইটি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা চলছে। এমনকি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে ব্যবসার চেষ্টা করছে এই গোষ্ঠী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভ চুরির ঘটনার পর থেকে দেশে সাইবার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বড় করে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি অর্থ ব্যয় করে বিদেশ থেকে প্রযুক্তিপণ্য কিনে আনলেই সেগুলো নিরাপদ হয়ে যাবে, এমন নয়। তা ছাড়া হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, হ্যাকিংয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি দেখা যাচ্ছে। সুতরাং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সতর্ক থাকলে চলবে না। প্রযুক্তিপণ্য দরকার হবেই। তবে সেগুলো ব্যবহারে কর্মকর্তাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অদক্ষতার তুলনায় অবহেলা বা অসতর্কতা থেকেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনায়ও দেখা যায়, কোরীয় নাগরিক পার্ক জিন হিয়কের পাঠানো ফিশিং মেইল থেকে তিনজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী ফাইল ডাউনলোডের চেষ্টা করায় অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় হ্যাকারা। ওই ঘটনার পর দেশে আইটি নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের তোলপাড় শুরু হয়। এর কিছুদিন আগে অবশ্য কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকেও একই ধরনের সাইবার হামলার চেষ্টা করা হয়। তা ছাড়া এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে তথ্য চুরি এবং কার্ড জালিয়াতি, ক্লোন কার্ড তৈরি করে অর্থ উত্তোলন এবং মাইকার চেক জালিয়াতিসহ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের নানা নিরাপত্তাহীনতা স্পষ্ট হতে থাকে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর তাঁদের ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোপুরি ঢেলে সাজানো হয়েছে। এতে তাঁদের প্রায় ৪০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করতে হয়েছে।

সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) সাইবার স্ক্যানার বসিয়ে দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কম্পিউটার থেকে এখনো ম্যালওয়ারের মাধ্যমে চীন, জাপান, রোমানিয়া ও কাজাখস্তানের হ্যাকাররা তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দিয়েছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠনসহ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তাদের সাইবার সিস্টেম এখন আর ততটা ঝুঁকিতে নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম   বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার এখন চারদিক থেকে এমনভাবে ঘিরে আনা হয়েছে যে সেখান থেকে আর্থিক লোকসান ঘটার কোনো আশঙ্কা নেই। ডিলিং রুমের কম্পিউটারে কোনো ম্যালওয়ার নেই। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত কর্মকর্তাদের কম্পিউটারে কোনো ম্যালওয়ার থাকলেও সেগুলো থেকে মূল সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ এখন আর নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিসিসির সাইবার সেন্সরে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের ম্যালওয়ার ধরা পড়ে এবং তারা যদি দেখতে পায় যে সেখান থেকে অনবরত তথ্য পাচার হচ্ছে, তাহলে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তখনই সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া দরকার ছিল। ইন্টারনেট সেবা তো তাদেরই হাতে। তারা এটা বন্ধ করেনি কেন?