হোস্টেলের ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংসের প্যাকেটেও ‘দাদী’ লেখা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মা তো মারা গেছে সেই ছেলে বেলায়। বাবা আর দাদীর কাছে কেটেছে শৈশবের বেশি সময়। তার পরে শুরু হয়েছে লেখাপড়া জীবনের একাকী সময়। রাজশাহী কলেজে ভর্তির পরে দাদী আসতো মাঝে মধ্যে। আর বাবা তেমন আসতো না। দাদী আসলে বেশি কান্নাকাটি করতো নাজমা ও তার দাদী।

 

বলছিলাম, রাজশাহী কলেজের হোস্টেলের নিজ কক্ষে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী নাজমা খাতুনের কথা। নিহত নাজমা রাজশাহী কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে সম্মান পাশ করেছেন। তিনি ভূগোলে বিষয়ে মাষ্টার্সে ভর্তিচ্ছু ছিলেন। রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টলের মেইন ব্লকের ১০১ নম্বর রুমে থাকতেন তিনি। নাজমা খাতুন রাজশাহীর দূর্গাপুরের পালিবাজার এলাকার আবু তাহের এর মেয়ে।

 
রাজশাহী কলেজ মহিলা হোস্টেলে দায়িত্বরত শিক্ষক জয়নাল আবেদীন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, মা মারা যাওয়ার পরে দাদী ছিলো একমাত্র ভরসা। দাদীকে নিয়ে নাজমার ছিলো রঙিন দুনিয়া। তার এই রঙিন দুনিয়াতে তার এক মাত্র কাছের সঙ্গী ছিলেন দাদী। তাই দাদীকে নিয়ে তার যত স্বপ্ন। এমনকি দাদীকে নিয়ে তার সব কিছু। হোস্টেলের ফ্রিজে প্রায় সবাই রাখে মাছ বা মাংস।

 

নিজের মাছ বা মাংসের পরিচিতির জন্য শিক্ষার্র্থীরা নিজের নাম ব্যবহার করতো। কিন্তু নাজমা সেই ফ্রিজে মাছ বা মাংসে রাখতো নিজের নাম না, দাদীর নাম। তার এই কলেজের হোস্টেলে আসার পর থেকেই তিনি ফ্রিজে রাখা মাছ বা মাংসের নিজের নামের স্থানে দাদীর নাম লিখতেন। সহপাঠিরা জানতো এটা দাদীর নাম মানে নাজমার। তাই সেটা কেউ নিতো না।

10305329_529892697116216_33996042325675576_n-copy

নাজমা খাতুনের সহপাঠিরা সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, নাজমা প্রায় নিরবে চলা ফেরা করতেন। আগে ভালোই ছিলো। এখন ক্লাস থাকলে বাইরে থাকে। আর না থাকলে বাইরে কোন কাজ থাকলে সেটা শেষ করে আবার সেই ১০১ নম্বর রুমে চলে যেতেন।

তারা আরও বলেন, রাজশাহী কলেজের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠন বাঁধনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক মাস যাবত তিনি সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে নাজমা কেনো যেতো না সেই বিষয়ে সহপাঠিরা কিছু বলতে পারেনি।

 

বাধনের একাধিক কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সে এমন পদক্ষেপ নিতে পারে তা কারো বিশ্বাস হয়না। খুব সরল সোজা ও অল্পভাষী ছিলেন এবং এ কারণে সে সবার মধ্যমনি হয়ে থাকতেন। তবে তার হঠাৎ বাধনে অনুপস্থিতির কথা কেউ বলতে পারেননি। এমনকি কলেজ ছুটিতে তার হোষ্টেলে থাকার বিষয়টিও জানত না কেউই।

 

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেছিলেন, নাজমার রুম থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তার মা মারা যাওয়ার পরে তিনি দাদীর কাছে লালিত পালিত হয়। তাই সে ওই নোটে দাদীকে নিয়ে তার আবেগের কথা লিখে রাখে।

 

প্রসংগত, শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজশাহী কলেজ হোষ্টেলের নিজ কক্ষে আত্মহত্যা করেন রাজশাহী কলেজের ভূগোল বিষয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নাজমা খাতুন। সকাল থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশের রুমের ছাত্রীরা এসে তাকে ডাকাডাকি করে। দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখে হোষ্টেলের দায়িত্বরত শিক্ষক জান্নাতকে খবর দেন। পরে দরজা ধাক্কিয়ে তার ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

 

স/শ