হোলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই কতিপয় উগ্রপন্থী সশস্ত্র তরুণ–যুবকের রাতব্যাপী নৃশংসতায় দেশি–বিদেশি যে ২২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আবারও অনুভব করছি যে আমাদের স্বদেশ ও সারা পৃথিবী থেকে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংসতার অবসান ঘটানো প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এমন বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অতি উগ্র ভাবাদর্শ। বাংলাদেশে সেই ভাবাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে প্রধানত তরুণসমাজকে সহিংস পথে আকৃষ্ট করার সুসংগঠিত তৎপরতার সবচেয়ে ভয়ংকর ফল আমরা দেখতে পেয়েছি সেদিন। যদিও এই অপরাধ প্রচলিত ফৌজদারি অপরাধগুলোর কোনোটার মতোই নয়, তবু এর আইনানুগ বিচার সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। এ হামলায় ২১ জনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনালে এর বিচার চলছে। পাঁচ হামলাকারী ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর অভিযানে নিহত হয়েছেন, পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন ১৩ জন। ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা কারারুদ্ধ আছেন। এ মামলায় ২১১ ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, অন্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ অব্যাহত আছে। আমরা আশা করব, অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত শেষ হবে এবং আসামিরা আইনানুগভাবে শাস্তি পাবেন।

হামলার বিচার সম্পন্ন করার পাশাপাশি দেশে জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সর্বশেষ পরিস্থিতি কিছুটা দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে। দেশি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগাযোগের বিষয়টি সুবিদিত; সেই আইএস ইরাক–সিরিয়ায় পর্যুদস্ত হওয়ার পর তার সদস্য জঙ্গিরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছে, যাচ্ছে, যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং আইএস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সক্রিয় তাদের কর্মীদের নিজ নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য বিশেষভাবে ইন্টারেনেটের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে, আইএসের প্রধান নেতা আল–বাগদাদি এক ভিডিও বার্তায় তাঁর অনুসারীদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার খবর জানিয়েছেন—এসব খবর বাংলাদেশের জন্যও কম উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ, আইএসের অনুসারীরা যেসব দেশে বেশি সক্রিয়, সেগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নামও উচ্চারিত হয়। তা ছাড়া ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের তৎপরতা বৃদ্ধির আলামত স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, ‘ইসলামিক স্টেট কামস ফর সাউথ এশিয়া’, তারা পাকিস্তান ও ভারতে পৃথক প্রাদেশিক সংগঠন খোলার ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ দেশে এখন জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, এখন তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। কিন্তু গত ২৯ এপ্রিল ও ২৬ মে ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে দুটি ছোটখাটো বোমা হামলার খবর পুলিশ সূত্রেই জানা গেছে। দুটি হামলারই দায় স্বীকার করেছে আইএস। এ থেকে এ দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গোপন তৎপরতার কিছু আভাস অবশ্যই মেলে; তবে তা কতটা ব্যাপক ও শক্তিধর সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক আছে।

আমরা জঙ্গি তৎপরতার অবসান চাই। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক ইত্যাদি কোনো ভাবাদর্শই যেন এমন উগ্র ও সহিংস রূপে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বিপথগামী করে নিষ্ঠুর দানব ও মানবতার শত্রুতে রূপান্তরিত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে; সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে সব ধরনের উগ্রকরণ বা র‍্যাডিক্যালাইজেশনের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।