হৃদয়ের টানে কাঁটাতারের পাশে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: মাঝখানে কাঁটাতারের কঠিন বেড়া। বেড়ার দুই পাশে দুই দেশের কয়েক হাজার মানুষ। এপার বাংলা আর ওপার বাংলার বাঙালিকে আজ শুক্রবার একত্রিত করেছে বাঙালিদের প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। সম্পর্কের টানের কাছে যেন হার মেনেছে কাঁটাতারের বেড়া।

নববর্ষ উপলক্ষে সকাল থেকে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় হয় এই মিলনমেলা। দুই বাংলার মানুষের এ মিলন মেলা চলে বিকেল পর্যন্ত।

সূর্যোদয়ের পর থেকেই পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে কাঁটাতারের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে। অপরদিকে, ভারতীয়রাও কাঁটাতারের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে।
পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) একমত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছ যাওয়ার অনুমতি দিলে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ঊভয় দেশের মানুষ কাঁটাতারের দুইপাশে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান করে।

ঠাকুরগাঁও জেলার ভুল্লী থেকে এসেছেন ছত্রমোহন রায় (৭০)। তিনি বলেন, ‘আমার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে ভারতের চাউলহাটিতে। আজকে নববর্ষের দিনে সুযোগ হয়েছে তাই মেয়ে-জামাই আর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। ওদের জন্য কিছু কাপড় আর খাবার জিনিস নিয়ে এসেছি।’
পঞ্চগড়ের জগদল এলাকার স্কুলছাত্রী কানিজ শারমিন সম্পা বলেন, ‘আমার দাদির বাবার বংশের প্রায় সবাই ভারতের জলপাইগুড়িতে বাস করেন। আজকে আমার বাবা মায়ের সঙ্গে আমার দাদু (দাদির ভাই) ও অন্য আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। দীর্ঘ  ১০ বছর পর তাদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে ভালো লাগল।’

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান-ভারত বিভক্তের পূর্বে পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ছিল। বিভক্তের পর এই সব এলাকা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। দেশ বিভাগের কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজন দুই দেশে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের  সহযোগিতায় অমরখানা সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, সকাল থেকে কাঁটাতারের দুইপাশে দুই বাংলার লোকজন উপস্থিত হতে থাকে। নববর্ষ উপলক্ষে এই মিলন মেলায় যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিজিবি এবং পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘নববর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিলন মেলায় আমি নিজেও গিয়েছি। সেখানে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে আমি মনে করি। দীর্ঘদিন পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারা মানুষের আত্মার পরিতৃপ্তি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।’

 

সূত্র: রাইজিংবিডি