হুজুরের কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় দুই বছর ধরে একঘরে!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃঘটনাটি সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের ভবানী গ্রামের। মসজিদভিত্তিক শিশুদের কোরআন শিক্ষা চলাকালে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে তাদেরই একজনের দাদী আলেয়া বেগম ও হুজুরের মধ্যে উচ্চবাচ্য হয়। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সমাজপতিদের রোষানলে পড়েন আলেয়া। তাদের ডাকা শালিসে হাজির হয়ে হুজুরের কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় তার পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে দুই বছর ধরে।

 
ভবানী গ্রামের মৃত আলী আকবরের মেয়ে আলেয়া বেগমের দাবি, প্রায় দুই বছর আগে প্রতিদিনের মতো এক সকালে তার নাতনি আঁখি স্থানীয় মসজিদে কোরআন পড়তে যায়। মেঝেতে বসা নিয়ে পাশের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ নিয়ে হুজুর নজরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তখন উচ্চবাচ্য হলে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এ ঘটনায় এলাকার গ্রামপ্রধান আবুল, নূরুল ইসলাম, নবী, নূরুল আমিন ও সৈয়দ শালিস ডেকে তাকে হুজুরের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় গ্রামপ্রধানরা তার পরিবারকে একঘরে করে।

 
আলেয়ার দাবি, তার একমাত্র ছেলে শাহিন একজন দিনমজুর। মাঝে মধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজও করে। এছাড়া বাড়ির পাশে তার নিজের প্রায় এক বিঘা আবাদি জায়গা এবং বিলে প্রায় সোয়া বিঘা আবাদি জায়গা ইজারা নেওয়া আছে। একঘরে হওয়ার কারণে তাদের সঙ্গে কেউ মেশে না। শাহিনকেও কেউ কাজ দেয় না। জমিতে বিলের ডিপমেশিন থেকে সেচের জন্য পানি নিতে দেয় না।

 

গত বছর আলেয়া বেগমের বাড়ির পাশের জমিতে পাটের চাষাবাদ করা হলেও ১০-১৫ মণ পাটের পরিবর্তে পানির অভাবে ফলন হয়েছে মাত্র তিন মণ। অন্যদিকে বিলের জমিতে ধান চাষ করা হলেও প্রায় ৩০ মণ ফলনের জায়গায় পানির অভাবে ফলন হয়েছে মাত্র ৮ মণ।

 

অনাহারে-অর্ধাহারে কান্না-আহাজারিতে কাটছে পাঁচ সদস্যের পরিবারটির জীবন। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পাশের ছাতনী গ্রামে আশ্রয় নিলেও ভবানী গ্রামপতিদের বাধার কারণে সেখান থেকেও প্রায় চার মাস আগে তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছে। মানবিক বিপর্যয়ে দুশ্চিন্তায় আলেয়া বেগমের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টসহ নানান অসুখ বাসা বেঁধেছে।

 

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গ্রামপ্রধান নূরুল আমিন ও আবুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযোগের আঙুল তুলে জানান, হুজুরকে জুতাপেটা করবে বলে উচ্চস্বরে হুমকি দিয়েছে আলেয়া বেগম। এ কারণে স্থানীয় দুই সমাজ শালিস ডেকে পরপর চারজনকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে হুজুরের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল আলেয়াকে। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। তাই সমাজের সিদ্ধান্ত ডিঙানোর কারণে তাকে একঘরে করা হয়েছে।’

 

এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল আমিন ও আবুল দাবি করেন, আলেয়া বেগমের বাড়ির ধারের জমির পাশ দিয়ে ডিপমেশিনের পানির ড্রেন ছিল। এটি ব্যবহার করে অন্যান্য জমিতে পানি দেওয়া হতো। আলেয়া সেই ড্রেনটি তুলে দিয়েছেন বলেই তার জমিতে পানি সেচ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।

 

মসজিদের হুজুর নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন তিনি তার ঘরে ছিলেন। এ সময় আলেয়া বেগমের নাতনির সঙ্গে অন্য এক শিক্ষার্থীর কথা কাটাকাটি হয়। হুজুরের অভিযোগ, ‘এ ঝগড়ার সূত্র ধরে তিনি মসজিদে প্রবেশ করে ওই শিক্ষার্থীকে বারবার শাসাতে থাকেন। আমি নিষেধ করলেও শোনেননি। বের হয়ে ঘরে ফেরার পথে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও তার মুখে গালিগালাজ শুনে সমাজের লোকজন তাকে একঘরে করেছে।’

 

হুজুরকে মারতে চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আলেয়া বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাড়ির ধারে তার জমির পাশ দিয়ে তৈরি করা কাঁচা ড্রেনের বিভিন্ন জায়গায় ইঁদুরের গর্ত তৈরি হওয়ায় তিনি সেটি তুলে দিয়েছেন। কিন্তু নতুনভাবে ড্রেন তৈরি করে অন্যান্য জমিতে ডিপমেশিনের পানি সেচ দিতে বলেছিলেন তিনি। তার কথায় কর্ণপাত না করে গ্রামপ্রধানদের নির্দেশে তার জমিতে ডিপমেশিনের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘আমাদের কী এমন অপরাধ ছিল?’- এ প্রশ্ন তুলে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

 

 

 

 

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন