হিসাব দিতে গড়িমসি ই-কমার্সের, কারণ দেখাচ্ছে করোনার

অনলাইনে লেনদেনের পুরো হিসাব থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকার হিসাব দিতে গড়িমসি করছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে দুই দফা সময় বেঁধে দেওয়ার পরও পুরো টাকার হিসাব দেয়নি কিউকম ও ফস্টার। প্রতিষ্ঠান দুটি করোনা মহামারির কারণ দেখিয়ে বলছে, সরকারের বিধিনিষেধের কারণে পুরোপুরি দাফতরিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না তারা। এ কারণে গ্রাহকের টাকার হিসাবও মেলাতে পারছে না।

অপরদিকে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টাকা মামলার কারণে আটকে আছে। ধামাকা, আলাদিনের প্রদীপ নামে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কোনো অফিসই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই অফিসহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, ৫০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা থাকলেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ও পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ফস্টার করপোরেশন একটি আংশিক হিসাব দিয়ে বলেছে, তারা আপাতত ৫৯ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারবে। মোট ৬ হাজার ৭২১টি লেনদেনের বিপরীতে তারা এ অর্থ পরিশোধ করবে। দুই দফা সময় বেঁধে দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠান দুটি গ্রাহকের টাকার সম্পূর্ণ হিসাব সরকারকে দেয়নি। এখন ওই আংশিক হিসাব  থেকেই ২০ জন গ্রাহক বাছাই করে আজ (সোমবার) থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কিউকম ও ফস্টার- এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থের হিসাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরে আরও এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। এখন প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে তারা পুরোপুরি অফিস খুলতে পারছেন না। এ কারণে টাকার হিসাব দিতে আরও সময় চেয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কিউকমের একমাত্র পেমেন্ট  গেটওয়ে অপারেটর ফস্টার পেমেন্ট। চলতি বছরের জুনের আগ পর্যন্ত কিউকম এবং ফস্টারের মধ্যে গ্রাহকদের অর্থ  লেনদেন হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠান দুটির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৫৯ কোটি টাকার হিসাব পেয়েছে সরকার। এর আগে গত অক্টোবরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স খাতের কারিগরি কমিটি জানিয়েছিল বর্তমান পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর কাছে গ্রাহকদের প্রায় ২১৪ কোটি টাকা আটকে আছে। ইভ্যালি কেলেঙ্কারির পর গত জুলাই থেকে সব লেনদেন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে করার নির্দেশনা দেয় সরকার। ফলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্ডার দিয়েও পণ্য পায়নি এমন গ্রাহকদের মোট পাওনা হিসাব করা হয় ২১৪ কোটি টাকা। এই টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত পেমেন্ট গেটওয়ে ছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহকের পাওনার পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা। এর মধ্যে ইঅরেঞ্জের কাছে ১ লাখ গ্রাহকের পাওনার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে ইভ্যালি তার সম্পদ বিবরণীতে মোট দায় ও মূলধন দেখিয়েছিল ৫৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দায় দেখানো হয় ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা মামলা করায় এর টাকা এখনই ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

 

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটির প্রধান এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা চলমান, সেগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরতের সুযোগ নেই। সে কারণে মামলা নেই এমন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আপসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে কিউকম ও ফস্টারের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ ২০ জন গ্রাহক প্রথম অর্থ ফেরত পাবেন। এ ছাড়া আলিশা মার্ট, ধামাকা, আলাদিনের প্রদীপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের টাকার পরিমাণ সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক পলাতক রয়েছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিসও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব মালিকের অফিস খোলা তারা আবার করোনার কারণ দেখিয়ে বলছেন, তাদের হিসাব করার মতো লোকজন নেই। সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা পলাতক মালিকদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জুমে মিটিংও হয়েছে। তারা টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন