হিজাব পড়ে গেলে গ্রেপ্তার হবেন না ইরানি নারীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নারীদের পোশাকের ব্যাপারে কঠোর রক্ষণশীল দেশ ইরানে অসাবধানতাবশত হিজাব মাথা থেকে সরে গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই সপ্তাহেই ইরানের রাজধানী তেহরানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণা দেন। তবে এর মাধ্যমে এক ধরনের মধ্যপন্থা অবলম্বন করা হয়েছে বলে আইনটির দিকে আঙুল তুলছেন নারীবাদীরা।

শুধু ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যেই নয়, ইরানে নারীদের পর্দার জন্য রয়েছে আলাদা আইনি বিধান। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দেশটিতে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। সে সময় থেকে হিজাব না পরলে ইরানি নারীদের গ্রেপ্তারও করা হতো।

তেহরানের পুলিশ প্রধান হোসেইন রাহিমি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ধর্মীয় পোশাকের রীতি পালন না করার জন্য এখন আর কোনো নারীকে গ্রেপ্তার করা হবে না বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও দায়ের করা হবে না।’ তিনি আরো বলেন, তবে যারা হিজাব পরবে না তাদের ইসলামি শিক্ষা ক্লাসে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হবে।

গত ডিসেম্বরে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এই নারী। ছবি : দ্য উইমেন ওয়ার্ল্ড

মাশিহ আলিনেজাদ একজন ইরানি প্রবাসী নারী। তিনি দেশটিতে বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আসছিলেন। তিনি পুলিশ কর্মকর্তা হোসেইন রাহিমির বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বক্তব্যে পুলিশ প্রধান বলেছেন, ভুল করে যদি মাথা থেকে হিজাব খুলে যায়, তাহলে নারীদের গ্রেপ্তার করা হবে না, কিন্তু তাদের ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসে পাঠানো হবে।‘

মাশিহ আলিনেজাদ আরো বলেন, ‘কেউ তাদের হিজাব ভুল করে খুলে রাখে না।‘

গত ডিসেম্বরে হিজাবের বিরুদ্ধে এক নারীর করা প্রতিবাদের কথাও তুলে ধরেন মাশিহ আলিনেজাদ।

প্রতিবাদী সেই নারী নিজের হিজাব খুলে একটি লাঠির মাথায় বেঁধে উচু স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর এই ছবিটি ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর জন্য গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল তাঁকে। পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এর পর পরই আরো তিন নারী একইভাবে প্রতিবাদ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েন।

মাশিহ আলিনেজাদ বলেন, ‘এই আন্দোলনকারীদের হাত ধরে সব নারীই এখন মুক্তি চাইছে।‘ পুলিশের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে বলেও উল্লেখ করেন আলিনেজাদ।

১৯৭৯ সালে হিজাব বাধ্যতামূলক ঘোষণার পর নারীদের বিক্ষোভ। প্রায় এক লাখ নারী অংশগ্রহণ করেন সেখানে। ছবি : দ্য উইমেন ওয়ার্ল্ড

তবে গত ডিসেম্বরেই নয়, ১৯৭৯ সালের পর থেকেই এই নিয়েও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন কিছু ইরানি নারী। সেই বছরই সবচাইতে বড় আন্দোলনটি হয়। মার্চের ৮ তারিখ, বিশ্ব নারী দিবসে প্রায় এক লাখ নারী তাদের হিজাব খুলে রাস্তায় নেমে আসেন।

ইরানের ফটোসাংবাদিক হেঙ্গামেহ গুলিস্তান সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি তুলেছিলেন। বর্তমানে লন্ডনে থাকেন এই সাংবাদিক। স্মৃতিচারণা করে গুলিস্তান বলেন, ‘সেদিন নারীরা আন্দোলন করতে এসেছিল। কারণ আগের রাতে ঘোষণা করা হয়েছিল, কাজে যাওয়ার সময় নারীদের হিজাব পরতে হবে। তাই তাঁরা কেউ সেদিন কাজে যাননি। সবাই ধর্মঘট করেন। খুব সকাল থেকে তাঁদের মিছিলটি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যায়।’