হাসপাতালের ভেতরে কুকুর, বাইরে নেশাখোর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রোগীর তুলনায় চিকিৎসক নেই বললেই চলে। ওয়ার্ডগুলো নোঙরা। সেখানে রোগীর পাশাপাশি দেখা মিলল কুকুরেরও। অন্যদিকে চত্বরে ঘাস খাচ্ছে গবাদি পশু, শুকানো হচ্ছে ধান-খড় আর ঘুটে। সন্ধ্যায় ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর শুরু হয় নেশাখোরদের আনাগোনা। চলে অসামাজিক কার্যকলাপও। সম্প্রতি সরেজমিনে গাইবান্ধা সদরের রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেল। একাধিক কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির এ দুরাবস্থা। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিতে জেলা শহরে কিংবা জেলার বাইরে চলে যাচ্ছে।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্টাফ কোয়ার্টারসহ আবাসিক ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অযত্ন আর অবহেলায় ভবনগুলোর দরজা, জানালা, গ্রিলসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পার্বতীপুর এলাকায় ছয় একর জমির ওপর ১০ বেডের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করা হয়। সে সময় দুজন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ‘আগ্রহ’ কমতে থাকে। বছর দশেক আগেও বেড (শয্যা) চালু ছিল। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে একপর্যায়ে অন্তবিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে রোগী ভর্তিও বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দুজন মেডিক্যাল অফিসারসহ পদ আছে ১৯টি। কিন্তু মেডিক্যাল অফিসারের দুটি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। শুধু উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আমিনুল ইসলাম, ফার্মাসিস্ট মাহবুবর রহমান, অফিস সহায়ক আফরিন নাহার, ওয়ার্ড বয় সাজেদা খাতুন ও সুইপার ময়না কর্মরত।

এ ছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স সহিদা খাতুন, নাজমা পারভীন, সুরাইয়া বেগম ও শাহিনা সুলতানা, সহকারী নার্স আনোয়ারা বেগম ও আব্দুস সামাদ, ল্যাব টেকনিশিয়ান ফাতেমাতুজ জহুরা, অফিস সহায়ক কোহিনুর বেগম ও একরামুল হক, ওয়ার্ড বয় এরশাদ হোসেন, রাঁধুনি হুসনে আরা এবং সুইপার শ্রীমতী মালা প্রেষণে গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে কর্মরত।

অথচ গড়ে প্রতিদিন ৬৪ থেকে ১৫০ জন রোগী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। এ অবস্থায় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আমিনুল ও ফার্মাসিস্ট মাহবুবর মিলে রোগীদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশন ও ওষুধ দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা নিয়মিত আসেন না বলে অভিযোগ। আর তাঁদের অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ড বয় ও অফিস সহায়ক রোগীদের চিকিৎসা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সমাজসেবী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জের একাংশসহ সদরের হাজার হাজার মানুষ একসময় জরুরি চিকিৎসার জন্য এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন তাঁদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হানিফ বলেন, ‘রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে সম্প্রতি অধিদপ্তরে কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’ সেগুলো অনুমোদন পেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চিত্র পাল্টাবে বলে মনে করেন তিনি।