হাসপাতালেই প্র্যাকটিস করতে হবে ডাক্তারদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

অফিস সময় শেষ করেই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস করতে বাইরে চলে যান। এতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বাইরে প্র্যাকটিস বন্ধ করতে হবে। অবশ্য এ জন্য সরকারি হাসপাতালে বসেই যাতে চিকিৎসকরা প্র্যাকটিস করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশনা দেন।

‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ’ শিরোনামের প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন বলে পরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখন থেকে যেসব হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে, সেগুলোতে অবশ্যই বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি স্থাপন করতে হবে। কেননা হাসপাতালের বর্জ্য মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া হাসপাতালের ভবন নির্মাণের সময় মনে রাখতে হবে, যাতে হাসপাতাল কক্ষের ভেতর পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারে। বাসা-বাড়ির মতো তৈরি না করে ব্যাংকক বা চেন্নাইসহ বিদেশে যে রকম হাসপাতালের জন্য বিশেষায়িত ভবন তৈরি হয় সে রকম নকশা করেই ভবন নির্মাণ করতে হবে।

এ ছাড়া হাসপাতালের ভেতর সবার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যান্টিন, কিডনি, হার্ট, ক্যান্সার ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জন্য আলাদা ব্লক তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, হাসপাতালে থাকতে হবে ডে-কেয়ার সেন্টার। সেখানে চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালে আগত রোগীদের শিশুরা থাকতে পারবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাসপাতালের যে ধরনের নকশা তৈরি করা হয়, দেখলেই মনে হয় বাসা বা ফ্ল্যাট। মানে একটা হোটেল হোটেল ভাব। উড়োজাহাজ থেকে দেখলে ঢাকাকে বন্দর বন্দর মনে হয়। মনে হয় হাজার হাজার কনটেইনার। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের মতো ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে আউটডোর আছে। আলাদা একটা উইং আছে। যেখানে বিকেল থেকে স্পেশালিস্ট ডাক্তাররা বসেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ রকম ব্যবস্থা করতে হবে।

একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক ও রোগীরা বাইরে বাইরে দৌড়ায়। হাসপাতালেই তাদের একটা সুন্দর জায়গা দিয়ে দেন। এখানেই তারা প্র্যাকটিস করুক, যাতে চিকিৎসকদের বাইরে যেতে না হয়। রোগীরাও সরকারি হাসপাতালেই সেবা পায়।

এদিকে গতকালের একনেক সভায় জামালপুরে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী স্থাপনসহ ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে দুই হাজার ৬৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পুরো টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

একনেকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, দেশি ফল ও ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি প্রকল্প আনতে হবে। যেসব ফল খেয়ে আমাদের বাবা-দাদারা বড় হয়েছিলেন সেসব ফল বেশি বেশি চাষ করতে হবে। শেখ হাসিনা নকশিপল্লী সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের নকশিশিল্প পুনর্বাসনে জামালপুরে ৩০০ একর জমিতে নির্মাণ করা হবে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২২ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। নানা প্রতিকূলতা ও পুনর্বাসনের অভাবের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পী ও শিল্প। তাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব শিল্পীদের একই ছাদের নিচে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে রাজধানীর গুলিস্তানে ৩৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ৮৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন, ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প।