‘হাসতে হাসতে গেনু পিকনিকে, রাতে বাড়ি আইনু লাশ লিয়্যা’

কামাল হোসেন,ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার নয়দিয়াড়ী গ্রাম, গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষি ও দিন মজুরের কাজ করেন। শ্রমজীবী মানুষগুলোর জীবনে আনন্দের উপলক্ষ ছিল একটি পিকনিক। গত এক সপ্তাহ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলে পিকনিকের আয়োজন করা হয়। গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে একটু আনন্দ করতেই গিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাবু ডাইংয়ে পিকনিকে। কিন্তু শুক্রবার সকালে হাসতে হাসতে পিকনিকে যাওয়া মানুষ গুলো রাতে স্বজনের লাশ কাঁধে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেন।

 

 

শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকেনয় দিয়াড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মোড়ে, মৃত তিনজনের বাড়ির সামনে শতশত মানুষের উপস্থিত। ফয়জুল ইসলাম নামে পিকনিকে অংশ নেয়া একজন জানান, সবাই মিল্যা সকালে হাসতে হাসতে বাসে কর‌্যা গেনু পিকনিক করতে, আর রাতে যখন বাড়ি এ্যানু তখন তিন জনার লাশ লিয়া। খুবই কষ্ট লাগছে এভাবে হামারগে ভাই-ভাতিজারাকে হারায়তে হবে এশবারও ভাবতেই পারিনি।

 

নিহত আব্দুল করিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন সন্তানকে সাথে নিয়ে আহাজারি করছেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। ছোট ছোট তিনটি শিশু সন্তানকে নিয়ে কিভাবে চলবে আগামীর দিনগুলো এ নিয়ে প্রতিবেশীরা চিন্তা করছেন।

 

আরমানী বেগম নামে এক প্রতিবেশী সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, খুবই গরিব করিম। কিছুই নায়, একবারই অভাবী ছিল। একদিন কাজ করলে চাল কিনা খাইত, না করলে আদপ্যাটা থাকতে হতো, ঘরও ভাঙ্গা একইবারে, টাকার অভাবে ঠিকও করতে পারেনি। অভাবের তাড়নায় করিমের জমজ এক মেয়ে নিশিতা খাতুন (৯) নানা  বাড়ি চকরুস্তমে থেকে পড়ালেখা করত। অন্য মেয়ে ইশিতা ও ছেলে মিজানুরকে নিজের কাছেই রেখেছিলেন করিম। তিন সন্তানই ৩য় শ্রেণীতে পড়ে। করিমের বাবা নজরুল ইসলামও দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ।

 

করিমের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন করিম। দিন মজুরের কাজ করে কোনোরকমে করিম পরিবারটি চালাত। বাস দুর্ঘটনায় নিহত আরেকজন, মো. হাসিম, তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারি। তার স্ত্রী জজেনুর বেগম বিলাপ করে বলছেন, কত কার কাছে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ডের ল্যাগা ঘুরল কেহু কর‌্যা দিল না। তিনি জানান, সংসার চলত একটা ছোট চায়ের দোকানের আয় থেকে।

 

আরেক নিহত এনতাজুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী কহিনুর বেগমকে সান্তনা দিচ্ছেন স্বজনরা। আট মেয়ে ও দুই ছেলে এর মধ্যে ৭ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে থাকে দুই ছেলে সোহাগ (১৬) ও আজমাইল (১৪) আর ছোট মেয়ে মারুফা (৯)। দুই ছেলে এখনো কাজের জন্য উপযুক্ত হয়নি এ কথা বলে আবুল হোসেন নামে একজন জানান, বয়স্ক হলেও এনতাজুল কৃষি কাজ ও দিনমজুরের কাজ করে চালাত পরিবার।

 

এদিকে নয়দিয়াড়ী গ্রামের করবস্থানে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত বাস দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। একসাথে গ্রামের তিনজনের জানাজায় কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীরা।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাবুডাইং থেকে পিকনিক করে ফেরার পথে বাস উল্টে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার এক নং ওয়ার্ডের মহাডাঙ্গা এলাকায় মহাডাঙ্গা বিলে পড়ে তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হন। অপরদিকে শনিবার সদর থানার এসআই আইয়ুব আলী বাস চালক মো. কালুকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

স/শ