‘হারলেও কৃতিত্ব দিতে হবে সাকিবদের’

সিল্কসিটিনিউজ ক্রীড়া ডেস্ক:

স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে হায়দ্রাবাদ টেস্টে ২০৮ রানে হেরেছে সফরকারী বাংলাদেশ। ফলাফল দেখে যেটাই মনে হোক না কেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো টাইগারদের বুক চিতিয়ে লড়ে যাওয়ার প্রশংসা করতে ভুল করেনি।

 

মাঝে-মধ্যেই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে খোঁচা দিয়ে সমালোচনা করা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার’ টাইগারদের টেস্ট পারফরমেন্সে মুগ্ধ। মুগ্ধ তাদের ক্রিকেট লেখিয়ে অশোক মালহোত্রা। নিজের কলামে শিরোনাম করেছেন ‘হারলেও কৃতিত্ব দিতে হবে সাকিবদের’।

 

ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোও ভারতের মাটিতে নাকানি-চুবানি খেয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো টেস্টে অনভিজ্ঞ দল ম্যাচ নিয়ে গেছে পঞ্চম দিনে। হায়দ্রাবাদ টেস্ট থেকে অনেক কিছুই শিখেছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংসেই একশ’ ওভারের বেশি ব্যাট করেছে মুশফিক বাহিনী।

 

বাংলাদেশ শেষ দিনে আরও ২৫-২৬ ওভার টিকে থাকতে পারলেই ম্যাচ বাঁচানো যেত। হারের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট শেষ হয়। বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা আফসোস করতেই পারেন! ইশ, দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিক-সাকিব-সাব্বির-মাহমুদউল্লাহরা যদি নিজেদের ইনিংসটা আরেকটু লম্বা করতে পারতেন! তারপরও হায়দ্রাবাদ টেস্টে টাইগারদের প্রাপ্তি কম নয়।

 

অশোক মালহোত্রা নিজের লেখায় বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো। অশ্বিন-জাদেজার স্পিন বোমার সামনে বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা দু’টো সেশনে উড়ে গেল। টেস্টটা যে মুশফিকুর রহিমরা হেরে যাচ্ছে, সেটা চতুর্থ দিনের শেষ দিকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বল স্পিন করার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ওই সময়। এমন পিচে পঞ্চম দিনের উইকেটে অশ্বিন-জাদেজারা ঠিক কী করতে পারে, সেটা ভারতের দশ বছরের কোনো বাচ্চাও বলে দেবে। স্রেফ ব্যাটসম্যানদের পুঁতে ফেলা।’

ছবি: সংগৃহীতএকমাত্র টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতার কথা লিখলেও অশোক মালহোত্রা টাইগারদের প্রশংসা করেছেন এভাবে, ‘তবে বাংলাদেশের একটা ভালো দিক কিন্তু বলতেই হবে। দলটা এখন আস্তে আস্তে টেস্ট ক্রিকেটের উপযুক্ত হয়ে উঠছে। অন্তত ব্যাটিংয়ের দিক থেকে। এক ইনিংসে ছ’শোর কাছাকাছি রান তোলা, সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি এগুলো নিউজিল্যান্ড সিরিজে করে দেখিয়েই কিন্তু উপ্পলে (রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম) নেমেছিল মুশফিকুররা। এই টেস্টেও তো দু’ইনিংসে দেড়শো ওভার ব্যাট করে দেখালো (প্রথম ইনিংসে ১২৭.৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০.৩ ওভার)। মুশফিকুর সেঞ্চুরি করল, মাহমুদউল্লাহ দারুণ লড়াই করল। বিশ্বের এক নম্বর টিমের ডেরায় নেমে তাদের মনের মতো পিচে পাঁচ দিন ম্যাচ টেনে নিয়ে যাওয়াটাও কিন্তু কম কথা নয়। সে দিক থেকে বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। আরও টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে আরও উন্নতি করবে এই টিমটা।’

 

অশোক মালহোত্রা নিজেও ক্রিকেট খেলেছেন। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বাংলাদেশের মাটিতেও খেলে গেছেন। টাইগারদের বিদেশে উন্নতি করতে হলে কি করতে হবে সে উপায়ও বাতলে দিয়েছেন তিনি, ‘১৬-১৭ বছর আগে বাংলাদেশের ক্লাব টিমের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। সেখানে ওদের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা খেলত। ঠিক তার পর পরই তো ওরা টেস্টে খেলার মর্যাদা পেল। কিন্তু ওরা তৈরি ছিল না। ওয়ানডে ক্রিকেটের মুড থেকে তখন বেরিয়ে আসতে পারেনি ওদের সেরা ক্রিকেটাররা। এখন ছবিটা অনেক পাল্টেছে। ইংল্যান্ডের মতো দলকেও কিন্তু দেশের মাঠে ওরা এখন হারাচ্ছে। তবে উপমহাদেশের চেনা পরিবেশে উতরে বিদেশে টেস্টে সাফল্য পেতে গেলে বাংলাদেশকে কিন্তু বোলিংয়ের দিকটা আরও নজর দিতে হবে। একজন স্ট্রাইক বোলার তুলে আনতে হবে। সে পেসার হোক বা স্পিনার। যে টানা নিখুঁত লেংথে বল করে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমাদের অশ্বিনের মতো। না হলে বিদেশের মাঠে কিন্তু বিপদে পড়ে যেতে হবে।’

 

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও অনেক দূর যেতে হবে জানিয়ে অশোক মালহোত্রা লিখেছেন, ‘এখনও তো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট পরীক্ষায় পড়েনি বাংলাদেশ। ওখানকার বাউন্সি উইকেটে গতিময় বোলিংয়ের সামনে পড়ার অভিজ্ঞতা হলে বুঝতে পারবে টেস্ট ক্রিকেটের পরীক্ষা কত কঠিন!’

সূত্র: বাংলা নিউজ