ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্ষণ শেষে পুড়িয়ে হত্যা করা দলিত তরুণীর পরিবারের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার পথে গত ৪ অক্টোবর নিখোঁজ হন সিদ্দিক কাপ্পান নামে এক সাংবাদিক।
কয়েক দিন পর দেশটির আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্ত্রী রেহনার অভিযোগ, সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই সিদ্দিককে ফাঁসানো হয়েছে। হাথরসে এত সাংবাদিক গেলেন, গ্রেফতার করা হল শুধু মুসলিম সাংবাদিককে।
দিল্লিতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে মুসলিম ওই সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানিয়েছে কেরালা ইউনিয়ন অব ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস নামে সাংবাদিকদের একটি সংগঠন।
নিখোঁজ ওই সাংবাদিক তার স্ত্রী রেহনা সিদ্দিককে শেষবার ফোন করেছিলেন ৪ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে। এর পর থেকেই ফোন বন্ধ সিদ্দিক কাপ্পানের।
অনেকবার মেসেজ পাঠিয়েছেন রেহনা সিদ্দিক। ফোনও করেছেন বহুবার। কিন্তু যোগাযোগ করা আর সম্ভব হয়নি সাংবাদিক স্বামীর সঙ্গে। ফোন বন্ধ জেনে তবু বার বার চেষ্টা করছেন যোগাযোগের।
সোমবার সংবাদমাধ্যমেই রেহনা জানতে পারেন, উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত পরিবারের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়ার পথে মথুরায় গ্রেফতার হয়েছেন সিদ্দিক।
তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, সিদ্দিক তার তিন সঙ্গী উগ্রপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই) এবং তার শাখা সংগঠন ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। হাথরসে জাতপাতের দাঙ্গা লাগানোর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ নিয়েছেন তারা।
সাংবাদিকদের কাছে সিদ্দিকের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন রেহনা। তিনি বলছেন, আমার স্বামী নির্দোষ। ও কখনও অন্যায় করেনি। দেশদ্রোহের অভিযোগ সত্যি নয়। ও শুধু সাংবাদিক হিসাবে সত্যিটুকু দেখাতে হাথরসে গিয়েছিল।
রেহনা জানান, গ্রেফতার হওয়ার রাতে সম্ভবত পুলিশ হেফাজত থেকেই তাকে ফোন করেন সিদ্দিক। তখনও স্ত্রীকে কিছু জানাননি সিদ্দিক।
দিল্লিতে মালয়লম সংবাদমাধ্যমের হয়ে কাজ করেন কেরালার সাংবাদিক সিদ্দিক। স্ত্রীকে বলেছিলেন, হাথরসে যাচ্ছেন নির্যাতিতা মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলতে।
রেহনা বলেন, ওকে প্রথমে ফোনে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওর ডায়াবেটিস আছে। মনে হচ্ছিল, করোনা হয়েছে কি না। পরে খবর দেখে জানতে পারলাম আসল ঘটনা।
তার অভিযোগ, সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই সিদ্দিককে ফাঁসানো হয়েছে। হাথরসে এত সাংবাদিক গেলেন, গ্রেফতার করা হল শুধু মুসলিম সাংবাদিককে। এখনও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।
বাড়িতে নিয়মিত স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভিড়। তার মধ্যেও প্রত্যেককে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন রেহনা। তার শাশুড়ির বয়স নব্বই বছর। তাকে এখনও জানানো হয়নি, ছেলে গ্রেফতার হয়েছে।
মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও দুই ছেলে, এক মেয়ের সামনে স্থির থাকতে হচ্ছে তাকে। দিল্লি থেকে সাংবাদিকের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছেন নিয়মিত।
সিদ্দিকের মুক্তির দাবিতে সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানিয়েছে কেরালা ইউনিয়ন অব ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস।
সংস্থার প্রেসিডেন্ট কে পি রেজি বলেন, উনি আমাদের এই কমিটির দিল্লির সেক্রেটারি। বহু বছর ধরে সিদ্দিকি কাপ্পানকে চিনি। সংবিধান রক্ষার লড়াই ছাড়া ওই সাংবাদিক আর কিছুই করেননি। আমাদের পেশাগত দায়বদ্ধতা রক্ষার জায়গা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। তার মুক্তির দাবিতে কেরালার সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে গণ-ইমেল করব।
রেহনাও বলেন, দিল্লির সাংবাদিক বন্ধুরাই ওর জন্য আইনজীবীর পরামর্শ নিচ্ছেন। আমি দিল্লি যাওয়ার কথা ভাবছি। কেরালা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পাশে থাকার আশ্বাস পাইনি। যেহেতু ও এই রাজ্যে থাকে না, দিল্লিতে থাকে, তাই হয়তো সরকারের উদ্যোগ নেই। তবে আমি তো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না। ছেলেমেয়েদের কাছে, প্রতি মুহূর্তে শুনতে হচ্ছে, বাবা কবে ফিরবে।
সূত্রঃ যুগান্তর