হাটহাজারীতে এখনও কাটেনি ছাত্র বিক্ষোভের জের

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র বিক্ষোভের রেশ এখনও কাটিয়ে উঠেনি। অজানা এক ভয় ও আতঙ্ক নিয়েই স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করছেন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

 

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুই দিনের ছাত্র বিক্ষোভে কার্যত অচল হয়ে পড়ায় যে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল, মজলিসে শূরার বৈঠক ও আনাস মাদানীর অব্যাহতির পর তা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এর মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় আল্লামা শফীর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের মতো হাটহাজারীতেও নেমে আসে শোকের ছায়া।

শনিবার আল্লামা শফীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী রোববার সকাল থেকে হাটহাজারীতে দাওরায়ে হাদিসের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলেও টানা দুই দিনের ছাত্র বিক্ষোভের জের এখনও কাটাতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের মুখে সব দাবি মজলিসে শূরা মেনে নিলেও অজানা এক ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। এছাড়া আল্লামা শফীর কার্যালয়ে ভাংচুরের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় এক ধরনের মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন তারা।

এর মধ্যে শনিবার হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রভাবশালী শিক্ষক মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভিডিওতে তিনি ছাত্র বিক্ষোভকে সন্ত্রাস ও বিক্ষোভকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে এজন্য হেফাজত মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দায়ী করেন। তবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চাপের মুখে পড়ে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাটহাজারী মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী বলেন, নানা কারণে বিগত দিনগুলোতে যেসব ছাত্র-শিক্ষক আল্লামা শফী ও আনাস মাদানীর সমর্থক ছিলেন বর্তমানে তারা ক্যাম্পাসে প্রচণ্ড রকমের ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।

ওই ছাত্র বলেন, ক্যাম্পাস কতটা অনিরাপদ তা আহমদ দিদার কাসেমীর বক্তব্য প্রত্যাহারের মধ্যেই বোঝা যায়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে স্বাধীন মতামত প্রদানের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে অনেক শিক্ষার্থী অভিমত দিয়েছেন।

তারা বলেন, একজন শিক্ষক যদি মন খুলে মাদ্রাসার ক্যাম্পাসেও কথা বলতে না পারেন তাহলে লেখাপড়ায়ও এর সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়বে।

হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলামের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরীর সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়।

এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, মাদ্রাসার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা চলছে।
মঙ্গলবার থেকে যথানিয়মে সব বিভাগের ক্লাস শুরু হবে।

মাওলানা আনাস মাদানীর অনুসারীদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তার অনুসারীদের কেউ এখন আর এখানে আছে বলে আমার জানা নেই।

মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমী বলেন, আমি এসব জানি না। তবে মাদ্রাসা খুব ভালোই চলছে।

সবদিক বিবেচনায় বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মিডিয়াকে এড়িয়ে চললেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলে আসা মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিগত দুই দিনের টানা আন্দোলনের যে ধকল প্রতিষ্ঠানটির ওপর গেছে, তা কাটিয়ে উঠতে আরেকটু সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জোহরের নামাজের পর মাদ্রাসা মাঠে ছাত্ররা হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু করেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ে (বেফাক) দীর্ঘদিন ধরেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা চলছিল। এ নিয়ে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়।

এসব সমস্যা নিরসন ও মাওলানা আনাস মাদানীর অপসারণ চেয়ে হাটহাজারীতে টানা দুই দিন পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চললে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে আল্লামা শফী স্বেচ্ছায় মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।

আনাস মাদানীকে অব্যাহতিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘মজলিসে শূরা’।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভের সময় মাদ্রাসার সব গেট তালাবদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

এছাড়া আহমদ শফী, আনাস মাদানী ও আহমদ দিদার কাসেমীসহ বেশ কয়েকজন উস্তাদের রুমে ভাংচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

 

সূত্রঃ যুগান্তর