হত্যা করে লাশ ফেলা হয় খালে, ৯ বছর পর গ্রেপ্তার আসামি ফজলু

রাজধানীর সবুজবাগের মাটির ঠিকাদারী ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে সুজন (২৬) হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি মো. ফজলু ওরফে কুটিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত সোমবার রাতে ঘটনার ৯ বছর পর রাজধানীর মুগদা থানার জান্নাতবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ টিম।

২০১১ সালের ১৪ মার্চ বন্ধু ফজলু কুটির সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন সুজন। এর ছয় দিন পর ১৮ মার্চ দুপুরে সবুজবাগ থানার দক্ষিণ রাজারবাগ বাগপাড়া শেষমাথা খালের ময়লা পানিতে কচুরিপানার সঙ্গে ভাসমান অবস্থায় সুজনের মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় ওই দিনই একটি মামলা দায়ের করেন।

এ সম্পর্কে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) ইউনিট ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ওসমান গণি জানান, মামলাটি প্রথমে সবুজবাগ থানা পুলিশ ও পরবর্তীতে ডিবি কর্তৃক দীর্ঘ প্রায় সাত বছর তদন্তের পর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তবে ঘটনার প্রকৃত রহস্য ও অভিযুক্ত পলাতক আসামি আছমা আক্তার ইভা, আরিফুল হক ওরফে আরিফ ও মো. রানা ওরফে বাবু গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে ভিকটিমের বাবা নারাজির আবেদন করেন। পরে আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

পিবিআই জানায়, আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ভিকটিম সুজনের সঙ্গে ইভার বিয়ে হওয়ার পরের বছরই ইভা সুজনকে ডিভোর্স দেয়। ডিভোর্সের পরও সুজন প্রায় সময় ইভাকে দেখার জন্য তাদের এলাকায় যাওয়া আসা করত। তাদের বিয়ে হওয়ার আগেই স্থানীয় ছেলে ফাইজুল ইভাকে পছন্দ করত। ইভার বড় ভাই আরিফের সঙ্গে ফাইজুলের বন্ধুত্বের খাতিরে তাদের বাসায় যাওয়া আসা ছিল।

এই ঘটনা নিয়ে ফাইজুল এবং ইভার বড় ভাই আরিফ ও সুজনের মধ্যে বিভিন্ন সময় তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতি হয়। ওই সময় সুজন ইভার ভাই আরিফকে চড়-থাপ্পড় দেয় এবং আরিফও সুজনকে থাপ্পড় দেয়। সুজনকে হত্যা করার ৭/৮ দিন আগে ফাইজুল সুজনকে মারধর করে।

এরপর ২০১১ সালের ১৩ মার্চ সন্ধ্যার পর আরিফুল হক, ফাইজুল তাদের বন্ধু কুটি ও কালা বাবু ইভাদের বাসার সামনে মাঠে বসে সুজনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের দিন ১৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে আরিফ তাদের বাসার পাশের চায়ের দোকান থেকে একটি সাদা পলিথিন ব্যাগ নেয়। ফাইজুল ও আরিফ লাঠি নিয়ে পাশের খালপাড় বালুর মাঠের দিকে যায়। এরই মধ্যে কুটি চলে আসে। তারা তিনজন এক সঙ্গে খালপার বালুর মাঠে অপেক্ষার কিছুক্ষণের মধ্যে কালা বাবুও চলে আসে।

পরে রাত আনুমনিক ৮টার দিকে কুটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকটিম সুজন খালপাড় বালুর মাঠে আসে। বিভিন্ন কথাবার্তার একপর্যায় ফাইজুল সুজনকে পেছন থেকে হাত দুইটি আটকে ধরে। আরিফ পকেট হতে পলিথিন বের করে কুটিকে দেয়। কুটি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে সুজনের মাথার ওপর থেকে গলায় ঢুকিয়ে দিয়েই গলার মধ্যে পেচ দিয়ে গিট দিয়ে ফেলে।

আরিফ লাঠি হাতে নিয়ে সুজনকে পেটাতে থাকে। পরে কালা বাবু আরিফ এর হাত থেকে লাঠি নিয়ে সুজনকে পেটাতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই সুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সুজন মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে তারা ধরাধরি করে লাশ পাশেই খালে ফেলে দেয়। কুটি এবং কালা বাবু খালের নিচে নেমে সুজনের লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। পরে তারা সবাই এলাকায় চলে আসে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে পলাতক আসামি ইভা, আরিফ ও রানাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে আরিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে সহযোগীদের নাম উল্লেখ করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ