হঠাৎ করে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন! বাড়ছে উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের হঠাৎ করে ঘোষিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। রাজশাহী শ্রম অধিদপ্তর থেকে মাত্র ১১ দিন আগে ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী এ নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।

মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেনকে বিজয় করতে শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ম্যানেজ হয়ে এ নির্বাচনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা। ফলে বিতর্কিত এ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

তাঁদের অভিযোগ, মাত্র দুই দিনের মাথায় ইচ্ছেমতো ভোটার তালিকা করা হয়েছে। ফলে যেসব শ্রমিক বছরের পর বছর সমিতির চাঁদা দেননি, তাঁদেরও ভোটার করা হয়েছে। আবার যাঁরা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছেন, তাদেরও অনেকেই বাদ পড়েছেন।

এদিকে বাদ পড়া ভোটাররা এরই মধ্যে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির কুমকুমসহ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৫ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন। দুই দিনের মধ্যে ওই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য শুক্রবার শ্রম অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির কুমকুমের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও টেলিফোনে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ২৪ মে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট গণনার সময় ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলি এবং বোমা বর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে রাজশাহী থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে দুইদিন।

সূত্র মতে, গত ৬ অক্টোবর রাজশাহী শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমগীর কুমকুম নিজেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিকের ইউনিয়নের তফশিল ঘোষণা করেন। মোটর শ্রমকি ইউনিয়নের গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করে শ্রম অধিদপ্তর থেকে আগামী ১৭ অক্টোবর এ নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। গঠনতন্ত্রে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশন বা চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্য নন বলে উল্লেখ থাকলেও শ্রম অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা নিজেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান পদে আদিষ্ট হয়েছেন। আবার তড়িঘড়ি করে মাত্র দুইদিনের সময় দেওয়া হয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং দাখিলের জন্য। গত ৮ অক্টোবর মনোনয়নপত্র দাখিল এবং সংগ্রহের দিন ধার্য ছিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১ অক্টোবর। এ নির্বাচনের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এই টাকা কোথায় থেকে আসবে তার কোনো হদিশ নাই।

অন্যদিকে মাত্র দুই দিনের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমাদানের শেষ সময় নির্ধারণ করে দেওয়ায় অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বা সেটি জমা দিতেও ব্যর্থ হয়েছেন। এতে করে তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা।

তাদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদে কামাল হোসেন রবি, দপ্তর সম্পাদক পদে মমিমনুল ইসলাম মমিন, সদস্য পদে আব্দুর রহমান ভুট্টু, কামরুজ্জামান টুটুলসহ আরও অনেকে।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য ও বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল ইসলাম মমিন, সদস্য আব্দুর রহমান ভুট্টুসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে জানান, রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে নির্বাচন করার চেষ্টা করছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা মাহাতাব হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। তবে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এরই মধ্যে তিনি শ্রম অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে হটাৎ করে নির্বাচনের দিন ধার্য করেন।

মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান আহ্বায়ক কামাল হোসেন রবি অভিযোগ করে জানান, শ্রমিক নেতা মাহাতাব অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন। তিনি শ্রম অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই হঠাৎ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন। এতে করে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারনেনি। আবার অনেকেই ভোটর হওয়ার যোগ্য হলেও, তাদের ভোটার করা হয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এ দিকে নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে অংশ নেওয়া আব্দুল করিম বলেন, এতো স্বল্প সময়ে নির্বাচন করা সত্যিই দূরহ ব্যাপার। সাধারণ ভোটারদের কাছেও এ সময়ে সাক্ষাৎ করা যাবে না। এমনকি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। কিন্তু নিল নকশা করে এ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হতে চেষ্টা করছেন মাহাতাব হোসেন।

তিনি আরও জানান, এ নির্বাচন বাতিলের দাবিতের এরই মধ্যে রাজশাহী আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে মামলাটি করেছেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া শ্রমিকদের পক্ষে কামরুজ্জামান টুটুল। তিনি গত ১২ অক্টোবর রাজশাহী যুগ্ম জেলা জজ আদালত-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।

এদিকে বিতর্কিত এ নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আলী। তিনি গত ১১ অক্টোবর পদত্যাগপত্র জমা দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে। ফলে এখন নির্বাচন কমিটির সদস্য রয়েছেন চারজন।

বিষয়টি নিয়ে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাহাতাব হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাচন হচ্ছে। যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা এ নির্বাচন ভন্ডুল করতে অপচেষ্টা চলাচ্ছে। আমরা কোনো অবৈধ কাজ করছি না। শ্রম অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এ কারণেই আমরা প্রার্থী হয়েছি।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৪ মে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট গণনার সময় ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলি এবং বোমা বর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে রাজশাহী থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে দুইদিন। এরপর কামাল হোসেন রবিকে আহ্বায়ক করে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং টার্মিনালে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেওয়ার অভিযোগে মাহাতাবকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।

স/আর