হঠাৎ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া, পুড়ল ১৬ একর জমির ইরি-বোরো

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রায় ১৬ একর জমির ইরি-বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া পূর্বপাড়া এলাকার এএনবি ২ ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় ওই এলাকার জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষক ও প্রজেক্ট মালিকদের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। একই কারণে ভাটাসংলগ্ন প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার বাড়ির আম, কাঠালসহ বিভিন্ন প্রকারের ফলের গাছ থেকে ফল নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ব্লক সুপারভাইজার তোফায়েল হোসেন ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় কৃষকের কয়েক লাখ টাকার ধান নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

এলাকাবাসী জানান, গত এক বছর আগে এ উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম ও তার আত্মীয় গাজীপুরের কড্ডা এলাকার রেজাউল করিম বহুরিয়া গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার ১০/১২ একর আবাদি জমি ভাড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনুমোদন ছাড়াই ভাটাটি স্থাপন এবং ইট পোড়ানো শুরু করেন। ভাটার একপাশে নদী থাকলেও তিন পাশেই শত শত একর আবাদি জমি। ওই ভাটাসংলগ্ন এলাকায় চারটি প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৩০-৩২ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা হয়।

গত ২৭ এপ্রিল সকালে ওই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ছেড়ে দেওয়ায় আশপাশ এলাকায় প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া প্রচণ্ড গরম অনুভব করে স্থানীয় লোকজন। গরমের সঙ্গে দুর্গন্ধের কারণে অনেকে বমিও করেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। ২৮ এপ্রিল জমির মালিকরা ধানক্ষেতে গিয়ে ধানগাছের পাতা লালচে আকার দেখতে পান। গত এক সপ্তাহের মধ্যে চারটি প্রজেক্টের প্রায় ১৬ একর জমির ধান পুড়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমির ধান গাছ সবুজ দেখা গেলেও ধানের ভেতর ভালো চাল হবে না বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভাটার আশপাশের জমির ধানগাছ লালচে হয়ে মরে যাওয়া ও ধানের ছড়া সাদা হওয়ার বিষয়টি দেখা যায়।

ওই এলাকার কৃষক ও স্থানীয় লোকজন জানান, আবাদি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করার পর থেকে ভাটা মালিকরা ওই এলাকার কৃষকদের নানাভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এ ছাড়া ভেকু মেশিন দিয়ে আবাদি জমির মাটি কেটে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান।

বহুরিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক রহম আলী, ঠান্ডু মিয়া, তারা মিয়া, করিম সিকদার, আলী মিয়া জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। ১০/১২ দিন পর থেকে ধান কাটাও শুরু হবে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ ভাটার ধোঁয়া ছেড়ে দেওয়ায় পুরো এলাকার জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক বাদশা খান, আতর আলী, জহিরম্নল ইসলাম জানান, ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে গ্রামের বাড়িগুলোতে উৎসব বিরাজ করে। কৃষকরা পুরো বছরের খরচের ধান গোলায় তোলেন। কিন্তু সে উৎসব আর নেই। এ বছর ভাটার ধোঁয়ায় আবাদ নষ্ট হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হবে। ভাটার ধোঁয়ার কারণে আশপাশের বাড়ির বিভিন্ন প্রকার ফল গাছে ফল-ও থাকছে না। তারা ধানের ক্ষতিপূরণ ও আবাদি জমির ওপর স্থাপন করা ইটভাটা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

মেশিন মালিক (প্রজেক্ট) বাদশা সিকদার, তারা মিয়া, হায়দার ও জালাল উদ্দিন জানান, তাদের প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৩০-৩২ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা হয়েছিল। ওই জমিতে পানি বাবদ বিদ্যুৎ বিল ও মেশিন চালকের বেতনসহ তাদের প্রত্যেকের প্রায় ৭০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। ধোঁয়ার কারণে প্রজেক্টের পুরো ধান নষ্ট হওয়ায় খরচের টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে এএনবি ২ ইটভাটা মালিক আব্দুর রহিমের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, খবর পেয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজার তোফায়েল হোসেনকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতি নিরূপণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কৃষকরা অভিযোগ দিলে ওই এলাকা পরিদর্শন করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।