হজের গুরুত্ব

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

হজ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো দৃঢ় সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ হলো হজ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য লাভের আশায় নির্দিষ্ট কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে কাবা শরিফ জিয়ারত করাকে হজ বলে। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য হজ ফরজ। হজের মাধ্যমে মানুষের দৈহিক, আত্মিক ও আর্থিক ইবাদতের সমাবেশ ঘটে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যে ব্যক্তিরই এ ঘর পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য থাকবে, সে যেন এ ঘরের হজ আদায় করে, আর কেউ যদি এ বিধান অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিকুলের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত ৯৭) আলোচ্য আয়াতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ আদায় করতে হবে, অন্য কোনো উদ্দেশে হজ আদায় করলে তা আদায় হবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ আদায় করেছে, যার মধ্যে সে কোনো অশ্লীল কথা বা কাজ করেনি সে হজ থেকে ফিরবে সে দিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৫২১)। সুবহানাল্লাহ। একজন হাজি সাহেবানের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? আল্লাহ আরও বলেন, তোমরা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ ও ওমরাহ পালন কর। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৬) হজের ফরজ তিনটি : ১. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। ২. ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৩. ১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে বাইতুল্লাহ শরিফ তাওয়াফে জিয়ারত করা। হজের ওয়াজিব ছয়টি : ১. ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের পর থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা ২. সাফা মারওয়া পাহাড় দুটিতে সায়ি করা ৩. মিনায় শয়তানকে কংকর (পাথর) নিক্ষেপ করা ৪. ইহরাম খোলার জন্য মাথা মু-ন করা ৫. বিদায়ী তওয়াফ করা ৬. কোরবানি করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে হজের ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে। (সুরা হজ, আয়াত ২৭)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) কীভাবে তালবিয়া পড়তেন তা আমি অবশ্যই জানি। তাঁর তালবিয়া ছিল, আমি হাজির হে আল্লাহ, আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির, সব প্রশংসা ও নিয়ামত কেবল আপনারই। (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৪৫৭)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি পবিত্র উপার্জন দ্বারা হজ করতে রওনা করে এবং জমিনে পা রাখে এবং লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলতে থাকে, তখন আকাশ থেকে আহ্বানকারী বলতে থাকে আমি হাজির এবং তোমার পুরস্কার দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। তোমার উপার্জন হালাল ও বরকতপূর্ণ। তোমার হজ কবুল হবে এবং তা প্রত্যাখ্যাত হবে না। (সহিহ বুখারি)

হজের মধ্যে প্রধান ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফায় অবস্থান। কোনো হজ পালনকারী ব্যক্তি যদি মুযদালিফায় রাতে অবস্থান করে এবং সুবেহ-সাদিকের পূর্বে আরাফাত ময়দানের সীমানায় উপস্থিত হয়ে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে তাহলে তার হজ আদায় সম্পূর্ণ হবে। রসুল (সা.) বলেন, আরাফাতে অবস্থানই হজ। (তিরমিজি শরিফ)।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

 

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন