হকারি করে জিপিএ-৫ পাওয়া সেই আশিকের পাশে……

মানুষ তো মানুষেরই জন্য। একজন মানুষ অন্য একজনের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটাই পৃথিবীর মানুষের বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যতা সব মানুষের মাঝেই ধারণ করা উচিত। তবে ক’জন কার পাশে দাঁড়ায়। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে, নিজ নিজ চাহিদায়। তবে এখনও সমাজে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লোক রয়েছে। আর এমনই একজন হলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত আওয়াজবিডি’র প্রকাশক ও সম্পাদক প্রবাসী বাঙালি শাহ আহমেদ সাজ। তিনি মেধাবী শিক্ষার্থী আশিক আলীকে কলেজে ভর্তির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আশিক এ বছরই জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তার এই অর্জনটা খুবই কষ্টের। তাকে পত্রিকা হকারি করে পড়তে হয়েছে এবং একই সঙ্গে পরিবারকেও চালাতে হয়েছে। এর কারণ তার উপার্জনক্ষম বাবা হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় আহত হন। ফলে তাকে কলেজ ভর্তি নিয়ে পড়তে হয় প্রচ- অর্থ সঙ্কটে।

এই অদম্য আশিককে নিয়েই গত ৩০ মে আওয়াজবিডি ডটকম-এ ‘হকারি করে জিপিএ-৫ পাওয়া আশিক কলেজে পড়তে চায়’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংশ্লিষ্ট অনলাইল নিউজ পোর্টালটির সম্পাদক ও প্রকাশক শাহ আহমদ সাজ এই নিউজটি ফেইসবুকে শেয়ার করে লিখেন ‘টাকা দিয়ে ডিগ্রি কেনা যায়, মেধা নয়…আমি পাশে আছি ভাই চালিয়ে যা…।’

এরপর তিনি ওই সংবাদের রাবি প্রতিনিধিকে জানিয়ে দেন যে, তিনি আশিকের কলেজে ভর্তির ব্যয়ভার বহন করবেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি আশিকের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

আশিকের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বাদুড়িয়া গ্রামে। তার পরিবারটি পাঁচ সদস্যের। আশিকের দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে, অন্যজনের বয়স দেড় বছর। বাবা অসুস্থ হওয়ায় এখনও তাকেই প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি করতে হয়। আশিক জানায়, সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কলেজ চয়েজে ভর্তির জন্য রাজশাহী অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ পেয়েছে।

আশিক বলেন, ‘সাজ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমি আমার লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে চাই। ভবিষ্যতে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।’

আশিক আরো বলেন, ‘আমার মতো আরো অনেকেই আছে, তাদের পাশেও দাঁড়াবেন। আসলে সমাজে তো অনেক মানুষই আছে। তাদের অনেক টাকাপয়সা আছে। কিন্তু সবাই তো সাজ ভাইয়ের মতো এ রকম সবার পাশে দাঁড়ায় না। সাজ ভাই আমার পাশে দাঁড়াইছেন। আমি ভষ্যিতে আপনার মত মানুষ হতে চাই, যেন ভবিষ্যতে আমি এ রকম দুখী ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে পারি।’

আশিকের বাবা আহসান হাবিব বলেন, ‘সাহায্য করার জন্য উনাকে অনেক ধন্যবাদ। আসলে আমি এখনও অসুস্থই। কাজ তেমন করতে পারছি না। আশিক কলেজে ভর্তি হবে কদিন পরেই। শুনেছি সেখানেও নাকি পড়তে অনেক টাকা লাগে। এখন তো আর ও হকারি করতে পারবে না। তাই অনেক চিন্তায় আছি।’

শাহ আহমেদ সাজ বলেন, ‘আমরা আওয়াজবিডি কাজ করি সমাজে যারা নিপিড়িত অসহায় তাদের জন্য। হয়তোবা আমরা প্রত্যেক সময় সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারব না; তবুও আমাদের সংবাদের মাধ্যমে, আমাদের সকল প্রচেষ্টায় আমরা এসব মানুষকে সাহায্য করে যাব। আগামীতে আরো বড়ো পরিসরে মানবসেবায় কাজ করবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আওয়াজবিডি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এর আগেও অনেক মানুষকে সাহায্য করেছি। এবার আমরা ঈদ উপলক্ষে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির ব্যবস্থা করলাম এবং সিলেটের একজন ক্যান্সার রোগিকে আমরা সাহায্য করতে পেরেছি। এতে আমরা সত্যিই আনন্দিত। আসলে আর্তমানবতার সেবায় যখন কোন অসহায় মানুষের সেবার প্রয়োজন হয়, তখন আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমার বন্ধুদের অনেক সময় নক করে থাকি। তারাও অনেক সময় সাড়া দিয়ে থাকে। কিন্তু এ সাহায্যটা হয়তো বড়ো হয় না কারণ মানুষের অনেক সমস্যাও থাকে। তারপরও যেন সেই সমস্যাটা দূর করে আমরা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, সেটা আমরা সর্বদা চেষ্টা করে যাব।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:

শফিকুল ইসলাম / রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়