‘সড়কের মান নিশ্চিত করতে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের সময় এসেছে’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকেৌশলী ইবনে হাসান আলম বলেন, আগামীতে সড়কে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের সিদ্ধান্তে বিলম্ব করলে নানা সমস্যা তৈরি হবে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি পলিমার বিটুমিন ব্যবহার নিয়ে। এখন আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে। এজন্য এই বিটুমিনের ব্যবহার নিয়ে বিলম্ব করা উচিত নয়। আমাদের সক্ষম টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং আছে। বর্তমানে টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং ল্যাবরেটরি এখন যন্ত্রপাতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পলিমার মোডিফায়েড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করার জন্য যত ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তার সমস্ত যন্ত্রপাতি আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। এখন আমাদের অনেক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, আর যেসব ঘাটতি রয়েছে আশা করি অল্প দিনের মধ্যে সেগুলোও করে ফেলতে পারবো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির উদ্যােগে ‘এপ্লিকেশন অব পলিমার মডিফাইড বিটুমিন পেভমেন্ট কনস্ট্রাকশন, এক্সপেরিয়েন্স, প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইভেন্ট স্পন্সর করেন বসুন্ধরা বিটুমিন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে পলিমার গ্রেড বিটুমিনের যে চাহিদা, তা উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে বসুন্ধরা বিটুমিন। এজন্য বিটুমিন আমদানিতে যে উচ্চ ব্যয় ও সময় অপচয় হতো, সেটা হবে না।

 

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ইবনে হাসান আলম বলেন, আগামীতে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বিলম্ব করলে নানা সমস্যা তৈরি হবে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি পলিমার বিটুমিন ব্যবহার নিয়ে। এখন আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে। এজন্য এই বিটুমিনের ব্যবহার নিয়ে বিলম্ব করা উচিত নয়।

তিনি বলেন, যতই কারিগরি ব্যাখা দেন না কেন, একটা সড়কের জীবন যদি ১০ বছর হয়, যেমন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক, উদ্বোধন করতে করতেই সড়কের লাইফটাইম শেষ। সেই সমাধান আসলে প্রকৌশলীদের বের করতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণকে সেই জবাব দিতে হবে এবং এটা প্রকৌশলীদের দিতে হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকেই দিতে হবে। সমাধান তাদেরকে দিতে হবে। না হয় আমাদের কথা শুনতে হবে।

সওজের সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সক্ষমতা যতটুকু আছে, আন্তরিকতার সর্বোচ্চ দিতে হবে। তা না হলে মানসম্মত সড়ক তৈরি সম্ভব নয়। মানুষকে সেবা দিতে হবে, এটা অনেক চ্যালেঞ্জের। তবে আন্তরিকতা থাকলে অনেকটা সেবা দেওয়া যাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়ক নির্মাণে টেকসই বিটুমিন প্রয়োজন। প্যারামিটার বিবেচনায় সড়ক নির্মাণে পলিমার বিটুমিনই যুগোপযোগী। ঢাকা-সিলেট চারলেন মহাসড়ককে পলিমার বিটুমিন ব্যবহার করা হবে।

তিনি বলেন, প্যানেল আলোচকরা পলিমার বিটুমিন ব্যবহার নিয়ে যুগোপযোগী আলোচনা করেছেন। এ সেমিনার থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান টেকসই সড়ক নির্মাণে কাজে লাগবে। সড়কে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের সময় এসেছে।

আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রীজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক এবং সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুস ছবুর। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নিশাত নোমান ও নাজমুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় সেমিনারে কী-নোট স্পীকার হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাকারিয়া, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাজমুস সাকিব, অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের জৈষ্ঠ্য প্রকৌশলী জাফর সাদেক চৌধুরী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এএসএম ইলিয়াস শাহ।

আলোচকের বক্তব্যে বুয়েটের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমাদের দেশে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, সেটা সড়কের জন্য টেকসই না। সেটা মন্ত্রণালয়কে অনেক বার বুঝিয়েছি। যুগোপযোগী বিটুমিনের অভাবে আমাদের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিটুমিন যাতে উচ্চ তাপমাত্রায়ও নরম না হয়, এজন্য গ্রেড বিটুমিন দরকার। সেই তাপমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় করে বিটুমিন উৎপাদন করলে সহজে নরম হবে না, সড়ক টেকসই হবে। পলিমার বিটুমিন ব্যবহার করলে সড়ক টেকসই হয়।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাজমুস সাকিব বলেন, পলিমার মেশালেই বিটুমিনের গুনগত মান উন্নত হয় না। বিটুমিনের গুণগত মান নিশ্চিতে সঠিক ভাবে নিয়ম মানতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সওজ বাংলাদেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। আমাদের দেশে যে সড়ক নির্মাণ করা হয়, তা সড়কের মেয়াদ অনুযায়ী সার্ভিস দিতে পারে না। আমাদের দেশে মূলত পেভমেন্টে সড়ক উপকরণের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি না, তা ভাবার সময় এসেছে।