স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইসিইউ বেডের হিসাবে ব্যাপক গরমিল-ডিবিসির প্রতিবেদন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ’র যে হিসেব পাঠিয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের আইসিইউয়ের যে হিসেব পাঠিয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। যে আইসিইউ এখনও প্রস্তুতই হয়নি, সেটিও অধিদপ্তরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু আইসিইউ নয়, আইসোলেশন বেডের হিসেবেও রয়েছে গড়মিল। হাসপাতালগুলোর সঙ্গে যোগযোগ করে এসব গরমিলের তথ্য পাওয়া গেছে।

মহাখালীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট দু’মাস ধরে তৈরি করা হচ্ছে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে। তবে, এখন পর্যন্ত শুধু বেড বসানো ছাড়া অন্যান্য কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম আনা হয়নি। অর্থাৎ এই সেন্টারটি এখনো চালু হয়নি। তবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিজেদের হিসেবের মধ্যে দেখাচ্ছে ১৫০০ শয্যা সংখ্যার কথা বললেও বাস্তবে আছে ১৩৯০টি। গত মাসের ২৮ তারিখ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিষয়ক পরিচালকের পক্ষ থেকে সারাদেশের আইসোলেশন বেড ও আইসিইউ এর তথ্য মেইল করা হয় গণমাধ্যমে।

একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই তালিকা পাঠানো হয়েছে হাইকোর্টেও। ওই তালিকায় আইসিইউয়ের যে হিসাব দেখিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক অনেক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ঢাকা মেডিক্যালে আইসোলেশন বেড দেখানো হয়েছে ৯১০টি, অথচ দুটি ইউনিট মিলিয়ে আছে ৮০০টি। আইসিইউ দেখানো হয়েছে ৪৮টি। যদিও চালু আছে মাত্র ১৪টি। আরও ১০টি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন বেড দেখানো হয়েছে ৫০০টি। তবে, ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বেড কমে এখন আছে ৩৮৪টি। এখানে আইসিইউ দেখানো হয়েছে ২৭টি। অথচ চালু আছে মাত্র ১০টি। বাকিগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২০০টি আইসোলেশন বেডের কথা বলা হলেও আছে ১৬৭ টি। আর খাতা কলমে আইসিইউ ২৬টি বলা হলেও এখন কার্যকর রয়েছে ১০টি। ১৬ টি প্রস্তুতির পথে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ১৫০টি আইসোলেশন বেডের কথা বলা হলেও রয়েছে ৬৫টি। আইসিইউ ৫টির কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত একটিও কার্যকর নয়। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ৫০০ শয্যা দেখানো হলেও করোনার জন্য এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব বেশি করাতে শয্যা সংখ্যা ১৫০টি কমে এসেছে। একইভাবে রেলওয়ে হাসপাতালে ৪০টি আইসোলেশন বেডের কথা থাকলেও আছে ৩০টি। মিরপুর লালকুঠি হাসপাতালে ২০০টির জায়গায় আছে ১৩০টি বেড।

দুই মাস হয়ে গেল মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়নি। তারপরও এখানে আইসোলেশন বেড সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৫০টি। যদিও চিকিৎসা শুরু হলেও সর্বোচ্চ ১১০ জনকে রাখা যাবে এখানে। আইসিইউ ১৬টির কথা বলা হলেও আছে ১৪টি। যার সবগুলো আবার করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব হবেনা। রাজধানীর বাইরে সারাদেশেরও প্রায় একই চিত্র। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় থাকা যেসব হাসপাতাল এবং যে বেড সংখ্যা রয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম।