স্বাধীনতা থাকবে না গণমাধ্যমের

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

তালেবান-পরবর্তী ইসলামী শাসনব্যবস্থায় আফগানিস্তানের গণমাধ্যম কোন দিকে যাবে তা নিয়ে এরই মধ্যে সংশয় প্রকাশ করছেন বিশ্বরাজনীতিবিদরা। এই সংশয় ঘিরে আফগানিস্তানের বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যামের স্বাধীনতা ও কর্মরত সাংবাদিকরা কী পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কালের কণ্ঠ। সেখানকার সাংবাদিকরা মনে করেন, এখানকার মানুষ তালেবানকে সন্ত্রাসী-চোর-ডাকাতের চেয়েও অনেক বেশি ভয় পায়। ফলে মানুষ চাপা ভয়ের মধ্যে আছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা থাকবে না।

কাবুলের আরিয়ানা নিউজের সাংবাদিক মোহাম্মদ আজমাল জালাজাই বলেন, ‘তালেবান মুখে বলছে এক কথা; কিন্তু যেটা বলছে সেটা করবে কি না, তা সময় বলে দেবে। তারা বলছে, নারীরা চাকরি করতে পারবে। মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে। কিন্তু তারা তো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা পায়নি। যখন ক্ষমতা হাতে নেবে, তখনই চেনা যাবে আসল চেহারা।’

২০ বছর আগের উদাহরণ টেনে আজমাল বলেন, ‘২০ বছর আগে তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কোনো মেয়েকে ঘরের বাইরে যেতে দিত না। স্কুল-কলেজেও যাওয়া নিষেধ ছিল। মানুষ এখনো সেই ভয়েই আছে। মানুষের কথা হলো, তালেবান তো এখনো সেই তালেবানই আছে। হয়তো তারা বদলাতেও পারে। কিন্তু সেটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য!’

গণমাধ্যমের কোনো বাকস্বাধীনতা থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তালেবান এখন শুধু আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে জানাতে চাইছে, আমরা আর আগের মতো নেই। তারা বলছে, নিউজ করতে হলে সেটা কোনোভাবেই তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। এখনই তারা এটা বলছে। সেখানে কিভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে?’

আজমাল বলেন, ‘তালেবান ইসলামের অনুশাসন অনুযায়ী সব কিছু চালাতে চাইছে। এসব টিভি চ্যানেল, পত্রিকা কিছুই থাকবে না। একেবারে শুরুতে যেভাবে ইসলামী অনুশাসনে চলত, সব কিছুই সেভাবে চলবে। তারা শুধু চাইছে যেকোনোভাবে ক্ষমতাটা হাতে নিতে। তাদের আদর্শ যেটা আছে, সেটাই প্রতিষ্ঠিত করবে। এখন খুব নরম হয়ে সব মেনে নিচ্ছে। কারণ এখন সবাই তাদের বিরুদ্ধে চলে গেলে সেটা তাদের জন্য ক্ষতিকর।’

এদিকে কাবুল নিউজ টিভির নারী সাংবাদিক রোমা আদিল বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজও আমি অফিসে এসেছি। শহরে সবখানেই তালেবানরা আছে, টহল দিচ্ছে। তারা তো তাদের মরজিমতো চলাফেরা করছে। তাদের মধ্যে কী চলছে সেটা তো আমরা বুঝতে পারছি না। একটু পরেই টিভিতে খবর পড়তে বসব। কিন্তু সব সময় একটা উৎকণ্ঠা-ভয় কাজ করছে। ভয়টা এত বেশি—মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় মৃত্যুও হতে পারে। আসলেই জানি না কেন মৃত্যুর ভয় পাচ্ছি।’

তালেবানের দেওয়া বিধি-নিষেধের কথা উল্লেখ করে রোমা বলেন, ‘তালেবান বলেছে ইসলামের অনুশাসন মেনে হিজাব পরতে হবে। হিজাব পরতে হবে বিষয়টি এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ না। এর মানে শুধু এটা নয় যে হিজাব পরলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। এর পেছনে আরো অনেক বাধা-নিষেধ আছে। যেটি আস্তে আস্তে প্রয়োগ করতে চাইবে।’

কাবুল নিউজ টিভির অফিসের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অফিসে কেউ তেমন কিছুই বলছে না। সবাই কাজ করছে। কিন্তু মনের মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছে সবার। এটা তো বুঝতেই পারছি। তবে সামনের দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে এটা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। হয়তো মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ করতে পারে। এটুকু বলতে পারি, সাংবাদিকরা যদি প্রতিবাদ করে, তার ফল খুব খারাপ হবে। তাদের কাউকে ছেড়ে দেবে না তালেবান।’

এদিকে সাংবাদিক হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন কি না? কাবুলের ওয়ান টিভি নিউজের সাংবাদিক মোহাম্মদ হাদি সাহার কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই প্রশ্নের উত্তর হলো ‘না’। আমি এখন যতটা স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করছি সেভাবে করতে পারব না। তারা সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। তাদের মতো করেই সব কিছু করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এমনকি সাংবাদিকতা কতটুকু টিকে থাকবে সেটাও ভাবার বিষয় এসেছে। আশা করি, তালেবান আগের ভুল করবে না। সারা বিশ্ব যেখানে তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। তারা যদি আবারও সুযোগের অপব্যবহার করে, এটা তাদের জন্যও ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে না।”

সূত্র: কালের কন্ঠ