স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও রাজশাহীবাসীর স্বপ্ন পূরণ নিয়ে হতাশা

ফাতেমা বিনতে করিম:

ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। চারিদিকে চলছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি। বিজয়ের ৪৮ বছর পাড়ি দিতে চলেছে বাঙালিরা। কিন্তু, এখনও প্রকৃত বিজয়ের সুফল ভোগ করতে পারেনি বাঙ্গালী। বর্তমানে দেশ উন্নতির শিখরে পৌছানোর অবিরাম গতি নিয়ে এগিয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে পিছিয়ে। স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ এখনও আচ্ছাদন হয়নি সাধারণ মানুষের।

কেমন আছে বাংলাদেশ, কেমন আছেন আপনি- এমন প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে সিল্কসিটি নিউজ পৌছে সাধারণ মানুষের কাছে। সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের শ্রেণী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী আর নারীদের দোরগোড়ায় যখন পৌছে তখন তাদের কাছে থেকেই উঠে আসে পিছিয়ে পড়ার গল্প। তাদের মতে স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মত প্রকাশের অধিকারটি যেন নগণ্য হয়ে আছে। একদিকে শিক্ষিতের হার বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে বেকারত্ব। দেশে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি হলেও নারীরা আজও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেনা। দুর্ণীতির প্রভাবটা এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে প্রবীনরাও তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের দরিদ্র আবুল কাশেম। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে বেড়ান। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েও বৃদ্ধাকে বাসায় রেখে শহরে জীবিকার টানে চলে আসেন তিনি। কথা হলে আবুল কাশেম বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আমরা দরিদ্ররা এর সুফল পাইনি। ৭০ বছর বয়স হয়ে গেলো, আজও বয়স্ক ভাতা নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানের দরজায় দাড়িয়ে থাকতে হয়। আমরা সেদিন স্বাধীন হবো যেদিন দরিদ্রদের সুবিধা সম্পুর্নভোগ করতে দেওয়া হবে।”

প্রত্যাশার সাথে যেন প্রাপ্তি মিলছে না। তবু কেউ আশাবাদী, কেউ তা-ও হতে পারছেন না। দারিদ্রতা বাড়ছে তবু কমছেনা। সমাজে এমন আরও অনেক আবুল কাশেম রয়েছেন যাদের মধ্যেও লুকিয়ে আছে অনেক কথা। রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিকা খাতুন বলেছিলেন- একটি নিরাপদ স্বাধীন বাংলাদেশের কথা। যেখানে নারীরা রাস্তাঘাট-যানবাহনে নিরাপদে চলতে পারবে। তিনি বলেন, “আমরা নিজের ভাষা পেয়েছি, বাংলাদেশ নামটা পেয়েছি কিন্তু আমরা মেয়েরা আজও স্বাধীনতা পাইনি। রাস্তাঘাটে আজও আমাদের ইভটিজিং-ধর্ষণের এর শিকার হতে হয়। নারীদের জন্য শিক্ষাক্ষেত্র উন্মুক্ত হলেও নিরাপদ আজও হয়নি। আমরা একটি নিরাপদ স্বাধীন বাংলাদেশ চাই।”

দেশে আজ পর্যন্ত নারীর অধিকারের অভাবের সার্বজনীন স্বীকৃতিই সৃষ্টি হয়নি। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে বড় হয় না মেয়েরা। জাতীয়তা বোধের অবস্থান থেকে সেই দেশের স্বাধীনতা একজন নারীর জন্য যত গৌরবেরই হোক না কেন, তার নিজের দৈনন্দিন জীবনে সেই দেশের স্বাধীনতা কতটুকু ভূমিকা রাখে তা ভেবে দেখবার বিষয়। বলেছিলেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলেয়া আখতার মৌসুমী। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মুশফিক উজ্জামান আকিব বলেন, ‘এখনও আমাদের ভাবতে হয় আমরা আসলেই স্বাধীন কিনা তাহলে এর চেয়ে বড় পরাধীনতা আর কি হতে পারে। আমি আমার সোনার বাংলাকে সত্যিই সোনার বাংলা হিসেবে দেখতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেনো বলতে পারে আমরা তাদের জন্য একটা সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে পেরেছি।’

নওরোজ পারভেজ নামক এক যুবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। এখন শিক্ষিতের হার বাড়ছে ঠিকই কিন্তু সে অনুযায়ী বেকারত্ব হ্রাস না পেয়ে গ্রাস করছে। প্রাইভেট সরকারী কোন ক্ষেত্রেই চাকরি নিতে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করতে হয়। তাহলে কষ্টার্জিত সার্টিফিকেটের মূল্য কোথায়। আমাদের স্বাধীনতা চায়ের দোকানেই সীমাবদ্ধ।

প্রকৃত বিজয় নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষের মানোন্নয়নের বিকল্প নেই। বিজয়ের উৎসব পালন করে অধিকার অর্জনের লড়াই আজও লড়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করে একটি সুখি-সমৃদ্ধশালী দেশ হবে বাংলাদেশ, স্বপ্ন দেখেন সাধারণ মানুষ। জনসাধারণের জন্য কল্যানময়ী হবে দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

 

স/শা