স্বপ্নের ব্যাসার্ধ ছোট কেন?

মাস্কাট থেকে দুবাই। পাশাপাশি দুই দেশের দুই শহর। আবহাওয়া প্রায় একই রকম। কিন্তু দুই দেশের শহরের মধ্যে বৈচিত্র্য অনেক।

সুলতান শাসিত ওমানের মানুষ দেখতে খুবই নিরীহ টাইপের। সৎ এবং কর্মঠ। কেবলমাত্র ট্যাক্সিওয়ালা ছাড়া সব কিছুই চলে সুশৃঙ্খল নিয়মে। সেখানকার ট্যাক্সিচালকরা অনেকটা বাংলাদেশের সিএনজিচালকদের মতোই। খেয়াল-খুশি মতো ভাড়া দাবি করেন। এই একটা বিষয় বাদ দিলে ওমান এক কথায় অসাধারণ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত আবার অন্যরকম। এখানে জীবনযাত্রার গতি অনেক ‘ফাস্ট’। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানকার মানুষ ছুটে চলেন। সব কিছুতেই কেমন যেন যান্ত্রিকতার ছাপ।

 

ওমানের মানুষ খুবই ধার্মিক প্রকৃতির। কেউ শর্ট পোশাক পরলে তার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকান ওমানিরা। মাস দুয়েক আগে সেখানে নতুন করে আইন জারি হয়েছে, হাফ প্যান্ট পরে কেউ মার্কেটে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, কারও পোশাক যদি তাদের কাছে শালীন মনে না হয়, তাহলে সেখানকার সাধারণ মানুষই অনেক সময় তিরস্কার করতে থাকেন।

আমিরাতে সম্পূর্ণ উল্টো সংস্কৃতি। কেউ কারও দিকে তাকানোর সময় পান না। তা ছাড়া নিয়ত এত বেশি মানুষ এখানে আসেন, যাদের আচার-আচরণ, সংস্কৃতি সবই ভিন্ন। পোশাক-আশাক অনেকটা ইউরোপীয় স্টাইলের। মানুষ নিজেকে অনেক বেশি স্বাধীন ভাবার সুযোগ পান। সে কারণেই মরুভূমির দেশ হলেও আরব আমিরাতের প্রতি পর্যটকদের অন্যরকম আকর্ষণ। প্রতিদিন যেন লাখো মানুষ এ দেশে আসা-যাওয়া করেন।

নানা ভাষা এবং নানা বর্ণের এ দেশটি আয়োজন করছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো মেগা আসর। সহআয়োজক হিসেবে ছিল ওমানও। এক দিন আগেই ওমানের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে। সেখানে কেবলমাত্র প্রথম রাউন্ডের ‘বি’ গ্রুপের কয়েকটি ম্যাচ ছিল। সেখানে বাংলাদেশ দল অম্ল-মধুর দুই ধরনের অভিজ্ঞতাই পেয়েছে।

প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল মিশন। প্রথম রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিরুদ্ধে ৮৪ রানের ক্যারিশম্যাটিক জয় দিয়ে ওমান অধ্যায় শেষ করেছে। প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর টাইগারদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছিল গ্রুপের শেষ ম্যাচে আগ্রাসী জয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন টাইগাররাই। দারুণ জয়ে ক্রিকেটাররা ভক্তদের নতুন করে আশাবাদীও করেছেন।

বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার সময় বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। এখন সেই স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে আসেনি টিম টাইগার্স। তবে ওমান অধ্যায়ে প্রথম ম্যাচে হারটা তাদের আরও বেশি আত্মপ্রত্যয়ী করেছে। আরও বেশি সাহসী করেছে।

সেমিফইনাল খেলার আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওমান থেকে বাংলাদেশ দল এখন পাড়ি জমিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। পরের রাউন্ডের সব ম্যাচ এখানেই। মাস্কাট থেকে সরাসরি দুবাইয়ে আসেন ক্রিকেটাররা। এখান থেকেই আবুধাবি এবং শারজায় ম্যাচ খেলার কথা। কারণ, দুবাই থেকে শারজা কিংবা রাজধানী শহর আবুধাবির দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়।

সাধারণ বাসে উঠে গেলেও সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টার বেশি লাগে না আবুধাবি যেতে। আর শারজার দূরত্ব তো মাত্র ১৫ মিনিটের। দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশের দুটি করে ম্যাচ আছে। দুবাইয়ে আছে মাত্র একটি খেলা। কিন্তু দুই শহরের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় এখানেই বেইজক্যাম্প হচ্ছে টাইগারদের।

দুবাইকে বলা হয় আধুনিক বিশ্বের রাজধানী। এখানে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন, অন্যদিকে খেলোয়াড়-সেলিব্রেটিরা সুযোগ পেলেই এখানে আসেন। এখানকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি কে না পছন্দ করেন?

দেশ আমিরাতকে চেনে না বিশ্বে এমন মানুষ খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু দুবাইকে চেনে না এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেন দেশকে ছাপিয়ে বড় হয়ে গেছে একটি শহর। এখানে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন ‘বুর্জ খলিফা’। আর বুর্জ খলিফার শহরেই এখন টাইগারদের আবাস।  কে জানে হয়তো আধুনিক বিশ্বের রাজধানীতে এসে এখন টাইগারদের স্বপ্নের পরিধিও বাড়তে পারে! কেন কেবলই সেমিফাইনালের আশা, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন না টাইগার ক্রিকেটাররা? এটা তো আবার বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বপ্ন যত বড় হবে প্রাপ্তির সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে! কিন্তু টাইগারদের স্বপ্নের ব্যাসার্ধ ছোট কেন?

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন