স্বপ্নকে ছাড়তে চান না মানসিক ভারসম্যহীন সেই মা

শাহিনুল ইসলাম আশিক:
চোখের ভাষা, মুখের ভাষা আর মনের ভাষা কি এক? সব ভাষায় কোনো এক ভাষার সঙ্গে মিল আছে। এসব ভাষা দিয়ে মানুষ তার ভাব প্রকাশ করে। নিজের জীবনের সার্বিক দিক খুঁজে নেয় মানুষ। যাদের মুখের ভাষা নেই, তারা ইশারা-ইঙ্গিতে সেই ভাব প্রকাশ করেন। এমনটিই যেন জাগতিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে শুক্রবার রাতে নিজের নবজাতককে জন্ম দিলেও মানসিক ভারসম্যহীন মা ইশারা-ইঙ্গিতেই বলে দিচ্ছেন, তিনি তার সন্তানকে (স্বপ্ন) হাতছাড়া করতে চান না। কাউকে লালন-পালনের জন্যেও দিতে চান না।

14642373_952112094917440_8365196631252841905_n

পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনা করে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মা ও সন্তানকে উদ্ধারকারীরা বিভিন্নভাবে তাকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু মুখে কথা বলতে না পারলেও প্রতিবরাই হলেও তিনি তার সন্তানকে কাউকে দিতে রাজি নন-সেটি তিনি তা মুখে বলতে না পরেলেও আকার-ইঙ্গিতে জানিয়ে দিচ্ছেন।

 

তার ইশারার ভাষাটি যেন এমন-‘আমার স্বপ্ন আমার সন্তান। যতই কষ্ট হোক, তার পিতৃ-পরিচয় না থাকুক, কিন্তু সে আমার সন্তান। আমিই তাকে লালন-পালন করবো। আমি যেমন পরের কাছে চেয়ে-চিন্তে খেয়ে বেঁচে থাকি, সেও ওভাবেই বড় হয়ে উঠবে। কিন্তু আমি তাকে কাউকে দিব না।’

মা মানসিক প্রতিবন্ধী। স্বপ্নর মায়ের নাম কেউ না জানায় তাকে বোবা বলে ডাকে এলাকার মানুষ। কথা বলতে পারে না। কিন্তু তাকে ইসারা করলে সে বুঝতে পারে এবং সেই কথার উত্তর দেয়।
মা-ছেলেকে আ‌র্থিক সাহা‌য্যে করা ছাড়াও তাদের দেখা-শোনা করছেন শিক্ষার্থীসহ  স্থানীরা। সেই সঙ্গে স্বপ্নকে নি‌তে চে‌য়ে অনকেই যোগা‌যোগ ক‌রে‌ছেন তাদের কাছে। কিন্তু ওর মা রাজি হয়নি। সেই স্বপ্নকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে রাবির কয়েকজর শিক্ষার্থীরা। তারা ফেসবুকে তাদের দুজনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।

শিশু স্বপ্ন জন্ম নেয়ার পরেই জানা-জানি হয়। এরপর ‘সিল্কসিটি নিউজে’ এ নিয়ে দুটি খবর প্রকাশ হয়। তারপর থেকে ওই মা-ছেলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। স্বপ্ন ও তার মা দেখাশোনার জন্য অনেকই অর্থিকভাবে সাহয্য করার কথাও জানান। স্বপ্ন ও তার মাকে দেখতে অনেকই রামেক হাসপাতালেও আসেন।

14590313_893559924108681_1814959637698895549_n

গত শুক্রবার স্টেশনে জন্ম নেয়া শিশু ও তার মাকে অসুস্থ্য অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা করা। শনিবার মা ছেলের শারীরিক অবস্থা ভালো হওয়ায় তাদের রিলিজ দেয়া হয়। পরে তাদের রাজশাহী বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য় রেলস্টেশ‌নের এক‌টি প‌রিত্যক্ত ক‌ক্ষ স্থানীরা পরিস্কার ক‌রে বিছানা ক‌রে তা‌দের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।

শুধু তাই নয়, রাবির কিছু শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন তার চিকিৎসা পত্রে যে ওষুধ আছে সেগুলো কিনে দিয়েছে। সে সঙ্গে তাদের মা ছেলে জন্য খাবার, কাপড়সহ প্র‌য়োজনীয় জিনিস পত্রের ব্যবস্থাও করেছে। বর্তমানে স্থানীয় ক‌য়েকজন তরুণ তাদের মা ছেলের দেখাশোনা করছেন। একজনকে সার্বক্ষনিক দেখা‌ভা‌লের জন্য নি‌য়ো‌জিত করা হ‌য়ে‌ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমরা বন্ধু নাজমুল সাবিক আর কয়েকজন মিলে সেইদিন এক হাজার টাকা তুলেছে। তার চিকিৎসাসহ অন্য খরচের জন্য। তার সন্তানসহ তিনি ভালো আছেন। আমরা সব সময় তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।

তিনি আরো বলেন, অনেকই তাকে লাল-পালন করার জন্য নিতে চেয়েছে। কিন্তু স্বপ্নর মা দিতে রাজি হয় নি। আমরা চেষ্টা করছি কেউ যদি স্বপ্ন ও তার মাকে একবারে দেখা শোনা করতে চাই তাহলে তাকে দেব বলে মনে করছি। তাছাড়া দেখা যাক তারা মা সন্তান দুজনই ভালো আছে।

স/আর