স্ত্রী ও খালাতো বোনকে আপন বোন সাজিয়ে..

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

মুক্তিযোদ্ধার ঔরসজাত কন্যা সেজে পোষ্য কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত দুই সহকারী শিক্ষিকা অবশেষে চাকরি হারালেন। তাঁরা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দুটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। উপজেলার রবিয়ারচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমানের ছেলে আশরাফুল আলম তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও খালাতো বোন শাপলা আক্তারকে জালিয়াতির মাধ্যমে সহোদর বোন পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন।

এমনই একটি গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই দুই শিক্ষিকার নিয়োগ বাতিল করে তাদের কাছ থেকে সমুদয় বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। তবে এই জালিয়াতির মূল হোতা শিক্ষিকা নাসরিন আক্তারের স্বামী সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার রবিয়ারচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমানের ছেলে আশরাফুল আলম ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নিজের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও খালাতো বোন শাপলা আক্তারকে সহোদর বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেন। খালাতো বোন শাপলা আক্তারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও একই পদে আরো কয়েকজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আশরাফুল আলম নিজেও মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য হিসেবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বকশীগঞ্জের মাদারেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। তারা তিনজনই কাগজপত্রে বাবার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমানের নাম ব্যবহার করেন। আশরাফুল আলমের স্ত্রী নাসরিন আক্তার বকশীগঞ্জের টুপকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং তার খালাতো বোন শাপলা আক্তার একই উপজেলার খেয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে নিয়মিত চাকরি করে আসছিলেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে এবং এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুবাদে সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম এলাকা ছেড়ে গাঢাকা দেন। মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদানের অভিযোগ পেয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয় গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় শিক্ষক নির্বাচন কমিটি সহকারী শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার ও শাপলা আক্তারের নিয়োগ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করেছে।

একই সাথে অধিদপ্তর ওই দুই নারী শিক্ষকের চাকরিতে যোগদানের সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিগত প্রায় পাঁচ বছরের উত্তোলিত বেতন-ভাতা আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। গত ২৫ অক্টোবর অফিস আদেশ হাতে পাওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে ওই দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক। তবে এই জালিয়াতির মূল হোতা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণের কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক আজ শনিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সন্তান পরিচয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সহকারী শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার ও শাপলা আক্তারের নিয়োগ বাতিল করেছে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। একই সাথে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই দুই শিক্ষকের যোগদানের সময় থেকে বর্তমান সময় পযন্ত উত্তোলিত বেতন-ভাতা আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বেতন-ভাতা আদায়ের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এই জালিয়াতির মূল হোতা সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত আমি কোনো নির্দেশনা পাইনি।

 

সূত্র: কালেরকন্ঠ