স্ত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে যৌন সম্পর্ক, আসলে কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

সপ্তাহে কম করে এক দিন পিঠে, হাতে কালশিটে নিয়ে বাড়ি বাড়ি বাসন মাজতে যায় টুম্পা (নাম পরিবর্তিত)। বৌদিরা জানতে চাইলে সটান জবাব, মদ খেয়ে এসে বর গায়ে হাত তোলে। সঙ্গে চলে জোর করে যৌনসম্পর্ক। তবে টুম্পা জানে, এটা স্বাভাবিক। মরদ তো একটুআধটু গায়ে হাত তুলবেই।

ঘটনা দুই: কয়েক বছর আগে সংবাদপত্রে বেরিয়েছিল খবরটা। ২৬ বছরের এক মহিলা ব্যাঙ্কক থেকে ফিরেছেন মধুচন্দ্রিমা সেরে। সঙ্গী যৌনাঙ্গের গভীর ক্ষত। কারণ মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে হিংস্রভাবে একাধিকবার যৌনসম্পর্ক করেছেন স্বামী।

ঠিক এই জায়গাতে এসে এক সারিতে দাঁড়িয়ে পড়ল খালপাড় বস্তির টুম্পা আর ব্যাঙ্ককে হনিমুন করতে যাওয়া ২৬ বছরের মেয়েটি। শিক্ষা, আর্থিক স্বচ্ছ্বলতা, সামাজিক অবস্থান, মানসিক গঠন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ— সব আলাদা। তবুও কোথাও একটা আলাদা নন এই দুই মহিলা। কারণ দু’জনেই বিবাহিত জীবনে সম্মতিহীত মিলন বা বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার। দু’জনেই এর কোনও বিচার পাবেন না। কারণ ভারতীয় আইন অনুযায়ী বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ নয়। তফাত্ একটা আছে অবশ্য। একজন বিচার চাইতে জানেন। আর একজন জানেন, এটাই তো স্বাভাবিক।

‘ম্যারিটাল রেপ’ কী?
যখন বিবাহিত সম্পর্কে স্বামী জোর করে বা ভয় দেখিয়ে স্ত্রীয়ের অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন সেটাই বৈবাহিক ধর্ষণ। যা গার্হস্থ্য হিংসারই অঙ্গ। তবে কোনও মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হলে তার জন্য আইন আছে। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এমনকী পরিবারের মধ্যেই তাঁকে স্বামী ছাড়া অন্য কোনও পুরুষ ধর্ষণ করলে তারও শাস্তি আছে। তবে স্বামী তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক করলে সেটা ধর্ষণ বলছে না ভারতীয় আইন। তার কোনও বিচারও নেই।

কোন কোন দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ?

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছিল ১৯২২ সালে। তার পর বিংশ শতাব্দী জুড়ে বিশ্বের প্রায় একশো দেশে বৈবাহিক ধর্ষণকে নিষিদ্ধ করা হয়। গত শতাব্দীর৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনত অপারাধের আওতায় আনার কাজ শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৩-এর মধ্যে সে দেশের ৫০টি স্টেটেই বৈবাহিক ধর্ষণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয়। ২০০৫-এ তুরস্কে, ২০০৭-এ মালয়েশিয়ায়, ২০১৩-তে বলিভিয়ায় বৈবাহিক ধর্ষণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী নেপালে বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ডনীয় হয়েছে ২০০৬ সালে।

২০০৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ মহাসচিবের রিপোর্ট অনুযায়ী, “অন্তত ১০৪টি দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য। এর মধ্যে ৩২টি দেশে (২০১১ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ৫২ হয়) বৈবাহিক ধর্ষণকে সুনির্দিষ্ট ভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে আইন হয়েছে। বাকি ৭৪টি দেশে সাধারণ ধর্ষণের আইনেই বৈবাহিক ধর্ষণের বিচার হয়। অন্তত ৫৩টি দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ কোনও শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।” এই শেষ তালিকায় আছে ভারত, চিন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, সৌদি আরবের মতো দেশ।

১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী কোনও পুরুষ তাঁর নিজের স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে সঙ্গম করলেও তা ধর্ষণ নয়। আইনজীবী সুমিত দত্ত চৌধুরীর কথায়, ‘‘বৈবাহিক সম্পর্কে স্ত্রী-র অসম্মতিতে স্বামী যৌন সম্পর্ক করলে তা অপরাধ কিনা সে বিষয়ে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডে নির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। বরং ধর্ষণের সংজ্ঞার ব্যতিক্রমে বলা হয়েছে, স্ত্রীয়ের বয়স ১৫ বা তার বেশি হলেই তাঁর সঙ্গে স্বামীর যৌনসঙ্গম বৈধ। এটা ধর্ষণ নয়। গোটা ঘটনায় স্ত্রীয়ের অনুমতি না থাকলেও তাকে ধর্ষণ বলা যাবে না।’’  পরবর্তীতে দেশের বিবাহ আইনে পরিবর্তন হয়েছে। ১৮ বছরের আগে বিয়ে করা এখন এ দেশে অপরাধ। কিন্তু আইনের এই ধারায় ১৫ বছরই রয়ে গেছে মেয়েদের যৌন সঙ্গমের বৈধ বয়স।  ধর্ষণ আইনেও সংশোধন, পরিমার্জন হয়েছে। কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে সরকার বা আইনসভার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি।

কিন্তু বিয়ে করেছেন বলেই কি কোনও মহিলা তাঁর স্বামীর ইচ্ছে মতো যৌনসুখ দিতে বাধ্য?

নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ যত বেশি বেশি করে উচ্চারিত হয়েছে দেশে দেশে, ততই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এই প্রশ্ন। কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ভারতীয় সমাজের মানসিকতায় কোথাও এখনও এই সাবেকি ধারণা রয়েছে যে, বিয়ে করা মানেই সম্মতি নিয়ে যৌন সম্পর্কের আর প্রয়োজন নেই। মেয়েদের ‘না’ বলার অধিকার রয়েছে এবং ছেলেদেরও সেই ‘না’কে সম্মান জানাতে হবে এই বোধটাই তৈরি হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখনও অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে মেয়েরা শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তুতির সময়টুকুও পান না। লভ ম্যারেজেও সমস্যা আসতে পারে। তবে তখন সেই ধর্ষণটা অনেক ক্ষেত্রেই রাগের বহিঃপ্রকাশ। য‌ৌনতার নয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক এক্ষেত্রে সামাজিক সাপোর্টের জায়গা থাকে না। মেয়েটি তার আত্মীয়দের কাছে বিষয়টি বললেও তাঁকে হয়তো শুনতে হয়, তোর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন এটাই স্বাভাবিক। বৈবাহিক ধর্ষণ তাই কোথাও বিবাহ প্রতিষ্ঠানটার মধ্যে মান্যতা পেয়ে গিয়েছে। যৌন সচেতনতার অভাবে এটা অনেকে বুঝতেই পারেন না, কোনও সম্পর্কে বলপূর্বক ঘনিষ্ঠতা কখনও আদর নয়। আর তা হলে দু’জনের কেউই প্রত্যাশিত আনন্দ পাবেন না।’’

বিয়ে=‘যৌন চুক্তি’
ভারতে বিয়েটাও অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো একটা চুক্তি। বলা ভাল, ‘যৌন চুক্তি’। কারণ ভারতীয় সমাজের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী বিয়ে করলে স্ত্রী-র শরীরের ওপর স্বামীর অলিখিত অধিকার স্থাপিত হয়। সে কারণেই স্ত্রী-র অসম্মতিতেও তাঁর সঙ্গে বিরামহীন, অনন্ত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অধিকারী হন স্বামী। আইনের চোখে যা কোনও অপরাধ নয়। অধ্যাপক তথা নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বললেন, ‘‘ভারতীয় সমাজে এখনও শোওয়াটা লিগালাইজ করার অনুষ্ঠানই হল বিয়ে।’’

এই সমাজেই যুক্তি খুঁজে নিচ্ছেন এ দেশের আইন প্রণেতারা

বৈবাহিক ধর্ষণকে নিষিদ্ধ করার দাবি এ দেশে বার বার উঠেছে। এমনকী সরকার গঠিত কমিটির রিপোর্টেও এই প্রস্তাব এসেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফ থেকেও বলা হয়েছে। কিন্তু সব সরকারই এ প্রসঙ্গ হয় এড়িয়ে গেছে, বা সম্ভব নয় বলে খারিজ করেছে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে-  দারিদ্র, ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাস, সামাজিক বিধি এবং ভারতীয় সমাজ-মানসিকতার কারণেই এমন আইন সম্ভব নয়। বিয়েকে একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয় বলেই এর মধ্যে ধর্ষণের অপরাধ ঢোকাতে রাজি নন আমাদের দেশনেতারা।

১৬ ডিসেম্বর ২০১২। দিল্লিতে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী নির্ভয়াকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনা দেশ জুড়ে আলোড়ন তোলে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইনের দাবি ওঠে। এটি বৈবাহিক ধর্ষণের কোনও ঘটনা না হলেও, বৈবাহিক ধর্ষণের প্রসঙ্গও চলে আসে আলোচনায়, চর্চায়। নির্ভয়া কাণ্ডের জেরে ২৩ ডিসেম্বর ২০১২ সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জেসি বর্মার নেতৃত্বে তৈরি হয় তিন সদস্যের বর্মা কমিটি। পরের বছর ২৩ জানুয়ারি এই কমিটি যে রিপোর্ট পেশ করে তাতেও প্রস্তাব ছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে সামগ্রিক ভাবে যৌন অত্যাচার বা সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের আওতায় নিয়ে আসা হোক।  কিন্তু তত্কালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার তা খারিজ করে দেয়। ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন আইনের সংশোধন হল বটে, কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণকে আনা হল না অপরাধের আওতায়। এ প্রসঙ্গে সংসদে এক দল জনপ্রতিনিধি যে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন তাতে লেখা ছিল, ‘যদি বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনের আওতায় আনতে হয় তা হলে পরিবার প্রথাই গভীর সমস্যার মধ্যে পড়বে।’

পরবর্তী বিজেপি সরকারও একই ধারায় কথা বলেছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হরিভাই পার্থিভাই চৌধুরি রাজ্যসভায় লিখিত বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ভাবে বৈবাহিক ধর্ষণের যে ধারণা, ভারতীয় প্রেক্ষাপটে তার যথোপযুক্ত প্রয়োগ সম্ভব নয়।’’ সে সময় সংসদে একটি লিখিত আবেদনের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গাঁধী বলেন, ‘‘পৃথিবীর বহু দেশ এই সমস্যা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে, কিন্তু ভারতের প্রেক্ষাপটে এই ভাবনা যথোপযুক্ত নয়। বিভিন্ন পর্যায়ে এ দেশে শিক্ষা, নিরক্ষরতা, দারিদ্র, অগুণতি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ, ধর্মীয় ভাবনা, মানসিকতা বিয়েকে পবিত্র একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনার সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কার এতটাই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে যে বৈবাহিক ধর্ষণের ধারণাটাই এ দেশে অলীক কল্পনা।’’

ভারতীয় রাষ্ট্রনেতাদের এই মানসিকতার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও।  ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি)-র প্রধান হেলেন ক্লার্কের মতে, এই না পারাটা ভারতের আর্থসামাজিক স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যকে বাধাপ্রাপ্ত করবে। তাঁর মতে, “…ধর্ষণ ধর্ষণই। বিষয়টা হল মেয়েদের সম্মতি আছে কি না, যদি কোথাও তা না থাকে, তবে সেটা ধর্ষণই।”

ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের তরফে পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশাতে ১৮-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই ফলাফলের সঙ্গে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যানকে মিলিয়ে গবেষণা করে একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন সমাজবিজ্ঞানী আশিষ গুপ্ত। সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রতি এক লক্ষ মহিলার মধ্যে ৬৫৯০জন সমীক্ষকদের কাছে স্বামীর দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছেন।

‘দিনের বেলা ঝি এর মতো খাটি, রাতের বেলা প্রসের মতো শুই’

বিবহিত সম্পর্কে মহিলার সম্মতির বিষয়টা সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল সমাজ? তাঁর অসম্মতিতে স্বামী জোর করে যৌনসম্পর্ক করলে তা যে অপরাধ, তার জন্য বিচার চাইতে হয়, প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থ হতে হয় এটা কতজন স্ত্রী জানেন বা মানেন? অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ শেয়ার করলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। ‘‘আমাদের কাছে একটি মেয়ে এসে একবার বলেছিল, দিনের বেলা ঝি-এর মতো খাটি, রাতের বেলা প্রসের মতো শুই। আমি এটাকে ক্লাসিক কমেন্ট বলি। নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত প্রফেশনাল বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে আসে। তাঁরা এটাকে ধর্ষণের পর্যায়ে ফেলেন না। আপত্তির পর্যায়ে ফেলেন না। বরং বলেন, স্বামীর চাহিদার সঙ্গে আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না। বিভিন্ন অশান্তির মধ্যে এটাও একটা কারণ।’’

যৌনতায় অসম্মতি নয়, যৌন ভঙ্গীতে অসম্মতি
নাম গোপন রেখে তাঁর কাছে চিকিত্সার জন্য আসা এক মহিলার কথা জানালেন অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০-এর কোঠায় বয়স। সুপ্রতিষ্ঠিত। কলকাতার বাইরে থাকা সেই চাকুরে দম্পতির সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল। প্রত্যেকবার শারীরিক ঘনিষ্ঠতার আগে মেয়েটিকে পর্নোগ্রাফি দেখতে বাধ্য করতেন তাঁর স্বামী। প্রথমে মেয়েটির মনে হয়েছিল, হয়তো এক-দু’বার আবদার করে চাইছে। তাই চরম আপত্তি সত্বেও মেনে নেন। পরে সেখান থেকেই জোর করা শুরু। শুরু অন্যান্য সাংসারিক হয়রানির। ছেলেটির একটি নির্দিষ্ট যৌনভঙ্গী ছিল। যেটা মেয়েটির পছন্দ নয়। এক্ষেত্রে যৌনতায় অসম্মতি ছিল না। যৌন প্রক্রিয়া বা ভঙ্গীতে অসম্মতি ছিল। এটাও বৈবাহিক ধর্ষণের আওতায় পড়বে বলে মনে করেন অনুত্তমা।

মহিলা না পুরুষ, কে দায়ী?
শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, দায়ী সমাজ। এক দিকে পুরুষ নিজেকে সুপিরিওর ভাবেন বলে, মনে করেন স্ত্রীয়ের শরীরের ওপর যে কোনও সময় তিনি অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আবার এটাকে বিয়ের প্রি-কন্ডিশন বলে মেয়েরাও কোথাও মেনে নেন।

আর কতদিন?
১৯৯১। তৈরি হয়েছিল ‘স্লিপিং উইথ দ্য এনিমি’। ২০১৪-এ হলিউড দেখল ‘প্রাইভেট ভায়োলেন্স’। এর মধ্যেই কখনও বলিউডের ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ (১৯৮৮), কখনও বা মেহেন্দি (১৯৯৮)-এর মতো ছবি তৈরি হয়েছে। বিষয় মেয়েদের ওপর গার্হস্থ্য হিংসা। তার মধ্যে সামান্য অংশে জায়গা পেয়েছে বৈবাহিক ধর্ষণ। যেহেতু বিয়ে নামক সাবেকি প্রতিষ্ঠান এই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে তাই কোথাও যেন তাকে একটু এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা গিয়েছে প্রতি পদে। সমাজ, আইন, সরকার সকলেই কোথাও আপোষ সমঝোতার পথে হেঁটেছে। কিন্তু আর কত দিন? প্রশ্নটা উঠছে এই সমাজ থেকেই।

সূত্র : আনান্দবাজার পত্রিকা