স্ত্রীকে ঘরে ফেরাতে দুই সন্তানকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন

মাদকসেবী স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যান স্ত্রী। কোনোভাবে স্ত্রীকে বাড়িতে ফেরাতে না পেরে নিজের দুই সন্তানকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন শুরু করে পাষণ্ড বাবা। পরে প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় মাদকসেবী স্বামী।

সোমবার (২০ জুলাই) ঝিনাইদহ সদরের ধানহাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরইমধ্যে মা শিরিন সুলতানা দুই সন্তানের নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় সদর থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে অভিযুক্ত শিমুলকে আটক করে এবং শিশু দুটিকে উদ্ধার করে দাদার জিম্মায় দেয়।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, নিজের দুই সন্তানকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে তাদের মাদকসেবী বাবা। একইসঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বলছে ‘তোর মা আমার কথা শোনে না কেন?’ এছাড়া সন্তানদের দিয়ে ঘর মোছানোর কাজও করানো হচ্ছে।

জানা যায়, ২০০৬ সালে জেলা সদরের ধানহাড়িয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান শিমুলের সঙ্গে বিয়ে হয় শহরের আরাপপুর এলাকার শিরিন সুলতানার। এ দম্পতির ঘরে দুটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে নানা কারণে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। ইতোপূর্বে তারা কয়েকবার পৃথকও থাকেন। এরপরও শিমুল তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ-বৈঠকও হয়। দুই বছর আগে অত্যাচার সইতে না পেরে দুই ছেলেকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে যান শিরিন। পরে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। স্ত্রীকে আবার বাড়ি ফিরে আসার দাবিতে দুই ছেলেকে চেয়ারে বেঁধে নির্যাতন করে শিমুল।

শিরিন বলেন, বিয়ের পর থেকে প্রায়ই আমাকে মারধর করত শিমুল। কয়েকবার সালিশের পর বাড়িতে নিয়ে আবারও মারধর করে স্বামী। এজন্য তাকে তালাক দিতে বাধ্য হই। এখন আবার আমাকে ফিরিয়ে নিতে সন্তানদের মারধর করা হচ্ছে।

child

ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার দিয়ে শিরিন লিখেছেন, ‘আমার বাসা আরাপপুর ঝিনাইদহ। এই বাচ্চা দুইটা আমার। এদের বাবার অত্যাচারের কারণে আমি চলে এসেছি বাবার বাড়িতে। ওরা ওদের দাদা-দাদির সঙ্গে থাকে। মাঝে মাঝে আমার কাছে আসত। ফোনে কথা হত। কিন্তু এখন ওদের বাবা এরকম অত্যাচার শুরু করেছে। ভিডিও করে আমার কাছে পাঠায়। আমি বাচ্চা কাছে রাখছিলাম কিন্তু জোর করে নিয়ে গেছে। বাসায় এসে ভাঙচুর করে। আমার কোনো ভাই নাই, বাবাও অসুস্থ। বাচ্চা মানুষ করার সামর্থও নাই আমার। তাই জোরও করতে পারি না। কিন্তু এখন অত্যাচারের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে আমার বাচ্চারা ওখানে থাকলে মরে যাবে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি বাইরে যেতে পারছি না। এমনকি আমার শ্বশুরও ফোন করে বলেছে, আমি গেলে আমাকে খুন করে ফেলবে। ওদের বাবা নেশা করে। মাথার ঠিক নাই। কাজ করে না। এমন অবস্থায় আমি খুব নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছি। আমি আমার বাচ্চাদেরকে আমার কাছে রাখতে চাই এবং ওর শাস্তি দাবি করছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করেন। ওর নাম হাবিবুর রহমান শিমুল। বাসা ধানহাড়িয়া, ঝিনাইদহ। পিতা লিয়াকোত আলী।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, স্ত্রী শিরিনের দায়ের করা শিশু আইনের মামলায় (শিশু আইন ১৯৭৪ সংশোধিত ২০১৩) শিমুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ