সৌরভ কথা রাখেননি…

‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’- সুনীল গাঙ্গুলির বিখ্যাত কবিতার প্রথম লাইনের সঙ্গে পুরোপুরি মেলানো যাবে না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলিকে। কেননা সৌরভের দায়িত্ব গ্রহণের যে এখনও এক বছরই পুরো হয়নি।

তবে কথা রাখতে না পারার প্রসঙ্গে মিল খুঁজে নেয়াই যায়। গত অক্টোবরে বিসিসিআই প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌরভের প্রথম এজেন্ডাই ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানো। শুধু প্রথমবারই নয়, বিগত দিনগুলোতে বারবার ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানো, পারিশ্রমিক বাড়ানোর ব্যাপারে কথা বলেছেন সৌরভ।

কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটেছে অল্পই। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে এখনও পারিশ্রমিক পাননি মুম্বাই, মহারাষ্ট্রসহ আরও অনেক দলের ক্রিকেটার। যারা তাকিয়ে আছেন বিসিসিআই প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলির সুদৃষ্টির দিকে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রঞ্জি ট্রফি এবং সৈয়দ মুশতাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলার পারিশ্রমিক পাননি অনেক ক্রিকেটার। গত মৌসুমের রঞ্জি ট্রফি এবং সৈয়দ মুশতাক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে মার্চে।

প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেসব খেলার ম্যাচ ফি বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক অর্থ পাননি অনেক ক্রিকেটার। রঞ্জি ট্রফিতে ম্যাচ ফি ৩৫ হাজার রুপি এবং মুশতাক আলি ট্রফির ম্যাচ ফি ১৭ হাজার ৫০০ রুপি। একজন ক্রিকেটার পুরো মৌসুম খেললে প্রায় ১৩ লাখ টাকার কাছাকাছি পেয়ে থাকেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সুত্রমতে মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, বেঙ্গল এবং ত্রিপুরাসহ আরও বেশ কিছু ঘরোয়া দল এখনও চলতি বছরের ম্যাচ ফি’র টাকা পায়নি। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টা আরও জটিল। কোন কারণ না জানিয়েই তাদেরকে অর্থ দেয়া বন্ধ রেখেছে বিসিসিআই।

মহারাষ্ট্রের এক খেলোয়াড় টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘আমরা ২০১৯-২০ মৌসুমের ম্যাচ ফি’র টাকা এখনও পানি। গত তিন মৌসুম ধরে কোন লভ্যাংশের টাকাও পাচ্ছি না আমরা।’

সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমে ঘরোয়া ক্রিকেটাররা সরাসরি ম্যাচ ফি’র টাকা পেয়ে থাকে। এছাড়া বার্ষিক লভ্যাংশের টাকা হিসেব শেষে দেয়া হয় সবাইকে। কিন্তু এখন লভ্যাংশ দূরে থাক, ম্যাচ ফি’র টাকাই না পাওয়ায় বিশেষ করে লকডাউনের মধ্যে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছে ক্রিকেটাররা।

এর মধ্যে আরও নেতিবাচক বিষয় হলো, বোর্ড থেকে ম্যাচ ফি ছাড়াও যে রাজস্বের ভাগটা পাওয়ার কথা ক্রিকেটারদের, সেটি ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে এখনও পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে মাসখানেক আগে বোর্ডের পক্ষ থেকে নানান তথ্যাদি নেয়া হলেও, কোন অর্থ পাননি ক্রিকেটাররা।

এ টাকাগুলো পেলে লকডাউনের মধ্যে অনেক সাহায্য হতো জানিয়ে এক খেলোয়াড় বলেছেন, ‘এসব টাকা আমরা পেলে লকডাউনের সময়টায় অনেক কিছুই সহজ হতো। বিসিসিআই এবং রাজ্য অ্যাসোসিয়েশনের বোঝা উচিৎ যে আমরা এ মৌসুমে বিদেশে গিয়ে খেলার সুযোগ হারিয়েছি। আইপিএলের ব্যাপারেও কোন নিশ্চিত তথ্য নেই। এছাড়া সবাই আইপিএল খেলেও না। ঘরোয়া ক্রিকেটাররা মূলত ম্যাচ ফি’র ওপরই নিজেদের সব টিকিয়ে রাখে।’

এদিকে বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি হয়তো কোন কারিগরি সমস্যা। কেননা তারা এরই মধ্যে রঞ্জি ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। এমনকি যাদের ইনভয়েস যাচাই করে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি তাদেরও সব পরিশোধ করা হয়েছে।

বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুন ধুমাল বলেছেন, ‘এটা কোন কারিগরি সমস্যার কারণে হয়ে থাকতে পারে। কিছু রাজ্য সংস্থা হয়তো এখনও তাদের ইনভয়েস জমা দেয়নি। আমরা এরই মধ্যে সৌরাষ্ট্র ও বেঙ্গলকে রঞ্জি ট্রফিতে প্রথম (২ কোটি রুপি) ও দ্বিতীয় (১ কোটি রুপি) হওয়ার পুরস্কারের অর্থ পাঠিয়ে দিছি। সেটিই ছিল মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্ট। ইনভয়েস যাচাইয়ে সমস্যা না পেলে সব ক্রিকেটারকেই টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে।’