সোমবার থেকে বাড়ছে ভাড়া, বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে হঠাৎ শুরু হওয়া বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার (০৭ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় রাজধানীর বিআরটিএ ভবনে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি জানান, সোমবার (০৮ নভেম্বর) থেকে বাস ভাড়া বাড়ছে, এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর দেশব্যাপী চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বাজারে জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন সমন্বিত ভাড়া অনুযায়ী, দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৩৮ পয়সা গুনতে হবে। এ ছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, সেটা ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪৫ পয়সা। মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। সেটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। কিলোমিটারপ্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়লো।

এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশে তিনদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট চলছিলো। পরিবহন মালিকরা শুরু থেকেই ভাড়া সমন্বয় বা ডিজেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কারণে গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।

ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পরদিনই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর ৫ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে বাস-ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। এতে সারাদেশে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ। তবে তেলের দাম বাড়ানোর পর শুরু থেকেই পরিবহন মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, ডিজেলের দাম না কমানো হলে গণপরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করতে হবে। ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়া সাধারণ মানুষ বলছে, বাসের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়াতে ধর্মঘট দিয়ে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করলেও সরকার তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভাড়া বাড়াতে চাপ তৈরির কৌশল হিসেবেই পরিবহন সিন্ডিকেট ধর্মঘটে দিয়েছে।

এরই মধ্যে ধর্মঘটের প্রথমদিন গত শুক্রবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আহ্বানে গত দুদিনেও সাড়া মেলেনি। ওই দিন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রোববার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে ভাড়া সমন্বয় করে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ যতটা সম্ভব সহনীয় রাখার চেষ্টা করা হবে।

সূত্র : আমাদের সময়