সোনা চুরি করেন দুই ভাই, বিক্রি করেন শ্বশুর

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

চুরির অভিযোগে জুলহাস (৩১) ও বিল্লাল হোসেন (২৬) নামে দুই সহোদরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাভার ও চাঁদপুরে অভিযান চালিয়ে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। ছোট ভাই বিল্লালের কাছ থেকে চুরি করা শেখেন জুলহাস।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে এক জোড়া হাতের চুড়ি, এক জোড়া কানের দুল, একটি চেইন এবং গলিত রূপান্তরিত সোনাসহ মোট ৮ ভরি ১০ আনা সোনা জব্দ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চাবি, রেঞ্জসহ চুরি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করে পুলিশ।

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানার আহাম্মেদনগরে সিরাজুম মুনীরা নামের একজনের বাসার তালা ভেঙে আনুমানিক ২৪ ভরি সোনা এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জুলহাস বিল্লাল ও তার ভাইকে শনাক্ত করা হয়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সাভারের গেন্ডা বাসস্টেশন থেকে বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মতলব থেকে জুলহাসকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়াও চোরাই এসব সোনা রাখার অভিযোগে লিটন বর্মণ নামে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ভোলার লালমোহন উপজেলার আবু কালামের ছেলে জুলহাস ও বিল্লাল। চুরি শুরু করেন সেই ছোটবেলা থেকেই। ২০০৮ সালে শুরু করে গত ১৫ বছর ধরে চুরি করছেন তারা।

গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যমতে, এই ১৫ বছরে তারা দুই শতাধিক চুরি করেছেন। এক জেলায় চুরি করেই তারা অন্য জেলায় চলে যান। ফলে অধিকাংশ ঘটনায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এতগুলো চুরি করলেও তারা ধরা পড়েন মাত্র ১০ বার। তবে মামলা হয়েছে মাত্র ৩টি। সাধারণত অন্য চোরেরা সবকিছু চুরি করলেও জুলহাস-বিল্লাল শুধু সোনা ও নগদ টাকা চুরি করেন। কারণ এই দুইটি সহজেই বহনযোগ্য।

শুধুমাত্র দিনে চুরি করতেন তারা
সাধারণত চোরেরা রাতের বেলায় চুরি করলেও ব্যতিক্রম এই দুই সহোদর। তারা চুরি করতেন দিনে। দিনের যে সময়টাতে বাচ্চারা স্কুলে থাকে সেই সময়টাকেই তারা চুরির জন্য বেছে নিতেন। ওই সময়ে বাসার পুরুষ সদস্যরাও অফিসে বা কাজের জন্য বাইরে থাকেন। আর নারী সদস্যরা থাকেন বাচ্চার স্কুলে। ফলে ওইসময় বাসা পুরো ফাঁকা থাকে। গাড়ি চালানোর সুবাদে আগে থেকেই এমন বাসা টার্গেট করতেন বিল্লাল। পরে জুলহাসসহ এসে ওই বাসায় চুরি করতেন।

দুই ভাইয়ের মধ্যে জুলহাস বড়, বিল্লাল ছোট। বয়সে ছোট হলেও চুরিতে গুরু বিল্লাল। মাত্র ১১ বছর বয়সে চুরি শুরু করেন বিল্লাল। তখনও শুধু সোনা আর টাকা চুরি করতেন। পরে তার কাছ থেকে চুরি শেখেন তারই বড় ভাই জুলহাস। এরপর দুই ভাই মিলে চুরি শুরু করেন। বিল্লাল সবসময়ই বাসা টার্গেট করতেন এবং পাহারায় থাকতেন। সেসময় বাসার মালামাল চুরি করতেন জুলহাস।

৩০ মিনিটেই ২৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি
একটি ভবনের তৃতীয় তলায় উঠে, এরপর দরজার তালা ভাঙেন দুই ভাই। পরে ঘরের সব আলমারির তালা ভাঙেন। ওয়ার্ডরোবের লক খোলেন, সব ড্রয়ার খোলেন। এরপর ২৪ ভরি সোনা এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করেন। আর এসব করতে জুলহাসের সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। ৩০ মিনিটেই প্রায় ২৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি করেন জুলহাস।

জামাই চুরি করেন, শ্বশুর করেন বিক্রি
মিরপুর মডেল থানার ওসি মহসীন আরও বলেন, জুলহাসের শ্বশুর মো. আলাউদ্দিন থাকেন চাঁদপুরের মতলবে। প্রতিবার চুরি করার পরপরই শ্বশুরবাড়ি চলে যান জুলহাস। জামাইয়ের এই চুরির কথা শ্বশুরের অজানা নয়। কিন্তু তিনি এতে বাধা দেওয়া দূরের কথা, উল্টো সহযোগিতা করেন জামাইকে। জামাই জুলহাস সোনা চুরি করে তা শ্বশুরের হাতেই তুলে দেন। এপর শ্বশুর সেই সোনা বিক্রি করেন।

রাজধানীর মিরপুর থেকে চুরি করা সোনাও জুলহাস তার শ্বশুরের হাতে তুলে দেন। শ্বশুর সেই সোনা চাঁদপুরের উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি জুয়েলারিতে বিক্রি করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালানোর সময় জামাই জুলহাস গ্রেফতার হলেও পালিয়ে যান শ্বশুর আলাউদ্দিন।