সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানীকৃত পাথরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বিএলপিএ ) ও বেসরকারীভাবে বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী টোল ও ফি আদায়ের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে আমদানী রবিবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানী ও রপ্তানীকারক গ্রুপের উপদেষ্টা কবিরুর রহমান খোকন জানান, রপ্তানিকারকদের অতিমূনাফা, ভারতের মোহদিপুর বন্দরে বিভিন্ন পন্যভর্তি ট্রাক সোনামসজিদ বন্দরে আসতে ওপারে অহেতুক লোকাল ট্রাকে পন্য পূনলোড করে বেশী ভাড়া প্রদানে বাধ্য করা, ইচ্ছাকৃতভাবে জট তৈরী করে বিলম্ব করিয়ে ট্রাক থেকে বিলম্ব ফি আদায়ে এমনিতেই লোকসানে পড়েছেন পাথর আমদানীকারকরা, তার উপর মৌখিক নির্দেশনায় অযাচিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী টোল ও ফি বাবদ টন প্রতি পাথরের জন্য বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে টাকা দিতে হলে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে কারোরই পক্ষে পাথর আমদানী করা সম্ভব হবে না। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে পাথর ভর্তি ট্রাকের জন্য গুনতে হবে ১৫২ টাকা প্রতিটন হারে এক ট্রাক পাথরের জন্য ৫০০০-৬০০০ টাকা, আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সবার সিদ্ধান্তেই ছিল ৭৮৩ টাকা। তিনি আরো বলেন, ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী টন প্রতি টোল ও ফি আদায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া সম্ভব নয়। সোনামসজিদ স্থলবন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারকরা পাথর আমদানীতে বিরত থাকবেন বলে সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোঃ তৌফিকুর রহমান বাবু ও উপদেস্টা কবিরুর রহমান খোকন জানান।

পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বেলাল হোসেন জানান, ট্যারিফ সংযোজন পানামার কোনো বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। গত ৯ ও ১৪ নভেম্বর সোনামসজিদ স্থলবন্দরের উন্নয়ন, কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহজীকরণ এবং সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী টোল ও ফি আদায় বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) ও যুগ্ম সচিব ডঃ শেখ আলমগীর হোসেন। গত ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভার ফলোআপ ছিল ১৪ নভেম্বরের মতবিনিময় সভা। আমদানীকারকরা জানান সিদ্ধান্ত ছাড়াই মতবিনিময়
সভা শেষ হয়,আমরা আমাদের অপারগতার কথা তুলে ধরি সভায়। ভারত থেকে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে মাসে পাথরবাহী প্রায় সাড়ে তিন হাজার ট্রাকে এক লক্ষ দশ হাজার মেট্রিক টন পাথর আসে বলে জানান বন্দর সংশ্লিস্টরা। এ থেকে রাজস্ব দিতে হয়
টন প্রতি ৭৭২ টাকা, এ হিসেবে সরকার মাসে রাজস্ব আহরণ করে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা,আর বন্দর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ প্রতি ট্রাকে যে ৭৮৩ টাকা নিত তার ৪৯ ভাগ পায় সরকার ৫১ ভাগ পায় বন্দর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে
আসা পাথর দেশের মেগা প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে। অন্য বন্দর থেকে ভারতের পাথর সমৃদ্ধ এলাকা সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পাকুড়ের দূরত্ব (প্রায় ৫০ কিঃমিঃ) কমের কারণে অনেক আমদানীকারক এই বন্দর দিয়ে পাথর আমদানী করছেন বেশী অন্য বন্দরের চেয়ে।

কয়েকমাস থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পাথর ছাড়া অন্য পন্য তেমন আমদানী বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান বন্দর সংশ্লিষ্ঠরা।

অপরদিকে, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের অন্য বন্দর দিয়ে পাথর আমদানিকারকরা সরকারকে ট্যারিফ দিয়ে আসছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ও ডেপুটি পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান, পাথর থেকে সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী টোল ও ফি আদায় না হওয়া গত ১৩ বছরে অন্তত তিন‘শ কোটি টাকা পায়নি সরকার।

ডেপুটি পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান শনিবার ১৫৭ টি ট্রাকে ৬ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন পাথর আমদানী হলেও রবিবার ১ টি টমেটো, ১ টি আদা ও ২ টি চাইনা ক্লে পাউডার ভর্তি ট্রাক ছাড়া কোন ট্রাক প্রবেশ করেনি এবং কোন পাথর ভর্তি ট্রাকও প্রবেশ করেনি। ভারতের ওপারে প্রায় দেড় হাজার পাথর বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে বলে জানান বন্দর সংশ্লিষ্ঠরা।

 

স/শা