সেশনজটের শঙ্কায় রাবির এপিইই ও ট্রিপল-ই’র সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল ই) বিভাগের সঙ্গে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (এপিইই) বিভাগকে একীভূতকরণের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের কারণে সেশন জটের শঙ্কায় পড়েছেন বিভাগ দুটির প্রায় সাড়ে তিনশো শিক্ষার্থী। প্রায় এক মাস আগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন করে আসলেও এখনও এর সুরাহা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি- তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্øাসে ফিরবেন না তারা।

এদিকে, দাবি আদায়ের জন্য প্রথম বিজ্ঞান ভবনের সামনে গতকাল সোমবার সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছে এপিইই’র শতাধিক শিক্ষার্থী। রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও বিভাগের সভাপতি গিয়েও তাদেরকে অনশন ভাঙাতে পারেনি। রাতভর অনশনের ফলে অন্তত দশজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেনেন্দ্র নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, ট্রিপল-ই এর শিক্ষার্থীরা বিভাগ একীভূতের বিপক্ষে প্রথম বিজ্ঞান ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই কর্মসূচি পালন করছিলো।

এপিইই বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ চাকুরির বিজ্ঞপ্তিতে এপিইই বিভাগের কোন কোড থাকে না এমন কারণ দেখিয়ে বিভাগটিকে ট্রিপল ই বিভাগের সঙ্গে একীভূত করার দাবি তোলেন এপিইই’র শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৫ নভেম্বর বিভাগের একাডেমিক কমিটি প্রকৌশল অনুষদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু ট্রিপল ই বিভাগের শিক্ষকদের বিরোধিতার কারণে ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত অনুষদের সভায় প্রস্তাবটি বাতিল করা হয় বলে সভায় উপস্থিত এক সদস্য জানান। পরে এপিইই’র শিক্ষার্থীরা অনুষদের সিদ্ধান্তকে বর্জন করে। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সভায় আবারও বিষয়টি উত্থাপিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচির অংশ হিসেবে এপিইই’র শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেয় তারা। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর বিভাগ দুটিকে এক না করার দাবি তোলেন ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরদিন থেকে তারাও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপিইই বিভাগে প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় আড়াই শো এবং ট্রিপল ই বিভাগের তিনটি বর্ষে প্রায় একশোজনের মতো শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। দুটি বিভাগেরই সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কোর্স সম্পন্ন না হওয়ায় সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিভাগ। এতে করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই কমপক্ষে ছয়মাস সেশন জটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এপিইই’র শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগ এক করার আন্দোলন এই প্রথম নয়। দুই বিভাগেরই সিলেবাসের মিল থাকায় ২০১৫ সালে ট্রিপল ই বিভাগ চালুর সময় শিক্ষার্থীরা এপিইই বিভাগকে ট্রিপল-ই করার দাবি জানায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় দাবিটি মেনে নেয়নি। শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে অধিকাংশ চাকুরিতে এপিইই’র কোন সাবজেক্ট কোড থাকে না। তাই আবেদন করাও সম্ভব হয় না। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট পেলেও চাকুরির ক্ষেত্রে ট্রিপল-ই কেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাই ভবিষ্যতের এ কথা চিন্তা করেই সেশন জটকে মুখ্য হিসেবে দেখছেন তারা।

ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, দুটি বিভাগের সিলেবাসে সামান্য মিল রয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত দুটি বিভাগকে এক করার কোন নজির নেই। বিভাগ এক হলে ট্রিপল-ই’র শিক্ষার্থীরা তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং বিভাগের নিজস্ব স্বকীয়তা হারাবে।

এপিইই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করায় জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। ক্লাসে ফিরলে আবার কবে নাগাদ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে সে বিষয়েও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা অনুষদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অনুষদ তা বাতিল করে দিয়েছে।’

ট্র্রিপল-ই বিভাগের সভাপতি আবু জাফর মু. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনুষদের সিদ্ধান্তের পরও শিক্ষার্থীরা কেন আন্দোলন করছে তা আমার বোধগম্য নয়। এ ছাড়া আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদেও পড়ালেখায় যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে।’

এব্যাপারে প্রকৌশল অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক একরামুল হামিদ বলেন, ‘বিভাগ দুটি এক করতে হলে দুই বিভাগেরই সম্মতি দরকার। সেটা না থাকায়, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগটি নিজ নামেই থাকছে।’

জানতে চাইলে বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘যেহেতু একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে সেহেতু এর সমাধান অবশ্যই করতে হবে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

 

স/আ