সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সেজে ভয়ঙ্কর প্রতারণা, হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। মাঝে মাঝে হয়ে উঠছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগ্রেডিয়ার কিংবা বিভিন্ন কোম্পানির সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার। ‘ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার’ দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা থেকে পণ্য নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কোটি কোটি টাকা। তবে শেষ নিস্তার হলো না তার। এমন অনেকগুলো অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এ এম এম সালাউদ্দীন ভূইয়াকে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ এর একটি দল।

গ্রেফতারের সময় তার অফিস থেকে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা বাঁধাই করা একটি ফটো ফ্রেম, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গেঞ্জি, ক্যাপ, মানিব্যাগ ও মেডেল, চারটি জাল লেটার প্যাড, একটি জাল সিল, দুইটি জাল ক্রয়াদেশ, দুইটি জাল সোয়াচ প্যাড, দুইটি চেক বই, তিনটি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট এবং নগদ প্রায় ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

আজ বুধবার কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এক সময়ে মাছের ব্যবসা করলেও পরে ভুয়া কোম্পানি খুলে প্রতারণা শুরু করেন প্রতারক সালাউদ্দিন ভূইয়া। তিনি নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানির সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার বা মার্চেন্ডাইজার পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানির কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের আবেদন করতেন। পরে ভুয়া ক্রয়াদেশ পেয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানিগুলো ক্রয়াদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পণ্য ডেলিভারি করতো। সালাউদ্দিন পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার পর তাদের টাকা পরিশোধ না করে পণ্যগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতেন। ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টাকা না দিয়ে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। এছাড়া নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবার কখনও আইজিপির আত্মীয় বা সংসদ সদস্যের নিকট আত্মীয় পরিচয় দিতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও হুমকি দিতেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি একজন ভুক্তভোগীসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়। এরপর র‌্যাব ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

গ্রেফতার সালাউদ্দিনের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, পাঁচ বছর ধরে তিনি এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে মহাখালীতে একটি অফিস সাবলেট নিয়ে গত তিন মাস ধরে এই অপরাধ করে আসছেন। কোনো ঠিকানায় তিনি ছয় মাসের বেশি অবস্থান করেন না। তাছাড়া ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এডিট করে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেছেন। তার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও পুলিশের এএসপি পরিচয় দেয়া দুই প্রতারকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন- ঘটনার মূলহোতা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ ওরফে সানি, রিশু ও সাইমা নিরা। তারা নিজেদের কাছে ওয়াকিটকি ও পিস্তল রাখতেন। যার সবই নকল ছিল। অভিযুক্তরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ভুক্তভোগী এক ট্রান্সজেন্ডার নারীর কাছ থেকে মোবাইল, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। এই ঘটনায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন